রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

সাদা পাথর লুট: অভিযুক্ত ইউএনওকে নিয়েই জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

সিলেটে সাদা পাথর লুটের ঘটনায় দোষীদের খুঁজতে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে সেখানে রাখা হয়েছে  কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে। যার বিরুদ্ধে লুটপাট ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, ইউএনও তদন্তে থাকলে মূল লুটেরারা চিহ্নিত হবে না। তাদের অভিযোগ, ইউএনও ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশেই হয়েছে এই লুট। এখন যা হচ্ছে তা লোক দেখানো।

জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই ভয়াবহ লুটপাটের শিকার হয়েছে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এবং এর পাশের ১০ একরের রেলওয়ে বাঙ্কার। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় শুরুর দিকে রাতে লুট হলেও সম্প্রতি দিনে-রাতে সব সময়ই হয়েছে। ফলে একেবারে পাথর শূন্য হয়ে পড়েছে সাদাপাথর পর্যটন এলাকা। আর খানাখন্দে পরিণত হয় রেলওয়ে বাঙ্কার।

স্থানীয়দের মতে, এই দুই স্থান থেকে কমপক্ষে দেড় কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি।

গত কয়েকদিন এ নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। তড়িঘড়ি করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসেন সিংহ। দুই সদস্য হলেন- কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক।

কমিটিকে সরেজমিন সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করে জড়িতদের চিহ্নিত করতে এবং তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এই কমিটি গঠনের পরই নানা সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে যে লুটপাট শুরু হয় তা থামাতে প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান ছাড়া কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। ইউএনও হিসাবে আজিজুন্নাহার যোগদান করেন এ বছরের ১৪ জানুয়ারি। এরপর অজানা কারণে সেই অভিযান আরও শিথিল হয়। এমন শিথিলতার কারণেই ধীরে ধীরে লুটপাটকারীরা তাদের লুটের মাত্রা আরও বাড়ায়। তাই যার অবহেলায় এমন লুটের ঘটনা তাকে দিয়ে তদন্ত করা হাস্যকর মনে করেন তারা।

 সাদাপাথরে নজিরবিহীন লুটপাটে প্রশাসনের দায় দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।

গত বুধবার সাদাপাথর পরিদর্শন শেষে  দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপ পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত বলেন, এখানে স্থানীয় প্রশাসন আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিলো। তাদের আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার ছিলো।

এ বিষয়ে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা সিলেটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, লুট ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন কোন উদ্যোগই নেয়নি। তারা পাথর লুটের ব্যাপারে একেবারে উদাসীন ছিলো। প্রশাসনই লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, যে তদন্ত কমিটি হেছে, এই কমিটির মাধ্যমে জেলা প্রশাসন প্রমাণ করেছে লুটপাটকারীদের তারা চিহ্নিত করতে চায় না। শুধু লোক দেখানোর জন্য এই কমিটি। তা না হলে যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এ ধরনের ভয়াবহ লুটপাট হয়েছে। তিনি এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকেই তদন্তের ভার দেওয়াটা জনগণের সঙ্গে তামাশা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কাশমীর রেজা বলেন, এই তদন্ত কমিটি থেকে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। যারা লুট করেছে তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় করেছে। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে দিনের পর দিন এমন লুটপাট সম্ভব হতো না। যদি যোগসাজশ থাকে তাহলে কি এই তদন্ত কমিটি যারা জড়িত তাদের সামনে আনবে। এদিকে শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে তদন্ত কমিটি।

কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসেন সিংহর কাছে জানতে চাওয়া হয় ইউএনও কমিটিতে থাকায় সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব কিনা। তিনি বলেন, অবশ্যই সম্ভব। ইউএনও লুট ঠেকাতে বহু অভিযান করেছেন, অনেক মানুষকে সাজা দিয়েছেন। সেসব কাগজপত্র সংরক্ষিত আছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ইউএনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটিতে ইউএনও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। যেহেতু ইউএনওর কাছে বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তা তদন্তে সহায়ক হবে। আমরা আশা করি যারা জড়িত তারা চিহ্নিত হবে।

তিনি বলেন, ইউএনওর যদি গাফিলতি থাকে তা জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখছে। তার গাফিলতির কারণে লুটপাট হয়েছে-এমন কিছু প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই সম্পর্কিত আরো