সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
বিশেষ প্রতিবেদন

সিলেটে মাঠে সরব ১২ ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন, বিএনপি বলছে সবগুলো ভুয়া

অনুমোদন নেই, রয়েছে দলীয় নিষেধাজ্ঞা। তবুও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ‘জিয়াউর রহমান’ এর নাম ও ‘জাতীয়তাবাদী’ শব্দ ব্যবহার করে একের পর এক গড়ে ওঠছে ভুঁইফোঁড় সংগঠন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তো বটেই, সিলেট বিভাগের সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়েও গঠিত হচ্ছে এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের কমিটি। আর সুবিধাভোগীরা বাগিয়ে নিচ্ছেন বড় বড় পদ। রাতারাতি বনে যাচ্ছেন যাচ্ছেন বড় বড় নেতা।


সিলেটে এরকম ১২টি সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা এসব সংগঠনকে ‘ভুয়া’ ও ‘ভুঁইফোড়’ দাবি করলেও সেটা মানতে নারাজ ভুঁইফোড় সংগঠনের দায়িত্বশীলরা। 


উল্টো তারা নিজেদেরকে বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম ও শুভাকাঙ্ক্ষী সংগঠন হিসেবে দাবি করছেন। আবার কেউ বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলেই অনুমোদন মিলবে তার সংগঠনের।


আরেকটি সংগঠনের দাবি, সিলেট বিএনপি প্রয়োজন হলে তাদেরকে ডেকে নিয়ে ব্যবহার করে। কিন্তু স্বার্থ ফুরায়ে যাওয়ায় এখন ভুঁইফোড় বলছে। 


বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী এই দলটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর দুইবার ক্ষমতায় আসে দলটি।


দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনঠাসা হয়ে পড়ে দলটি।  ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও সম্প্রতি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষেধাজ্ঞার পর দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে দলটি। আর এই আলোচনাকে পুঁজি করে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে বিএনপির সহযোগী কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী পরিচয়ে বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম।


সম্প্রতি সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যানার-পোস্টার দেখে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা দেখে বিএনপির অনুমোদিত ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বাইরে আরো অন্তত ১২টি সংগঠন কার্যক্রম সিলেট ভয়েসের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে। 


১২ সংগঠনের মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী ব্যবসায়ী দল, জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম দল, জিয়া মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী স্বাধীন দল, জাতীয়তাবাদী সমাজসেবা দল, জাতীয়তাবাদী প্রযুক্তি দল, জাতীয়তাবাদী তরুণ দল, জিয়া সাইবার ফোর্স, জাতীয়তাবাদী তরুণ প্রজন্ম দল, জাতীয়তাবাদী নবীন দল, জাতীয়তাবাদী বাউল দল ও জিয়া সৈনিক দল। 


ভুঁইফোড় এসকল সংগঠনের দৌরাত্মে ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ৫ মে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য একটি সর্তকবার্তা প্রকাশ করে। এ সতর্কবার্তায় তারা বিএনপির তার অনুমোদিত ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বাইরে অন্য কোন সংগঠনের স্বীকৃতি নেই জানিয়ে এসকল সংগঠনকে ভূঁইফোড়, অবৈধ বা স্বঘোষিত সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয়।


এর আগে গত ৯ জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জাতীয়তাবাদী শব্দ ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠন অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি তাদেরকে প্রতারক চক্রের মাধ্যমে খোলা ভুয়া সংগঠন হিসেবে দাবি করেন এবং পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগীরা এসকল সংগঠনে পদ বাগিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে উল্লেখ করেন।


বিএনপির ঘোষিত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ও ওলামা দল। এর বাইরে বিএনপির অনুমোদিত কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নেই। 


তবে এতোসব ঘোষণারও পরও থেমে নেই জাতীয়তাবাদী শব্দ ও জিয়াউর রহমানের নাম ব্যবহার করে গড়ে ওঠা ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। অনুমোদন না থাকা সত্বেও বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। কখনো কখনো তাদের এসকল অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত থাকায় প্রশ্ন উঠছে এসকল সংগঠনের বৈধতা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে।


সিলেট জেলা ব‍্যবসায়ী দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ব‍্যবসায়ী দল বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, এটি ভুয়া না। আমাদের সংগঠন বিএনপির অঙ্গসংগঠন না হলেও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম‍্যান তারেক রহমান দেশে আসলেই এটির অনুমোদন হয়ে যাবে। আমরা বিএনপির রাজনীতি করি, আমরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী।’


সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী স্বাধীন দলের সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জন্ম হয় ২০২০ সালে, যদি ভুয়া রাজনৈতিক দল হতো তাহলে এটির বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে  কেন ব‍্যবস্থা নেওয়া হল না? আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়তো নয়াপল্টনেই, তাহলে দলের সিনিয়র নেতারা কেন এসব নিয়ে কথা বলেন না? আমরা খোঁজখবর নিয়েই জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছি। এটা ঠিক যে অনেক ভুয়া সংগঠন তৈরি হচ্ছে, আমাদেরকেও কেন্দ্র থেকে এদের থেকে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।’


সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী বাউল দলের সদস‍্য সচিব নোমান উদ্দিন রিপন তার দলকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন দাবি করে বলেন, ‘আমরা বিএনপির অঙ্গ সংগঠন বা সহযোগী সংগঠন না, আমরা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। বিগত সময়ে বিএনপি আমাদের সংগঠনকে সবসময় ডেকে নিয়ে ব্যবহার করেছে। আমাদের কর্মসূচিতেও তারা এসেছে। এখন কেউ যদি ভুয়া বলে তাহলে কী করার আছে? তার মুখেতো ধরা যায় না। উনারা যদি দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে খালেদা জিয়া মনে করেন এটা তাদের ব‍্যাপার।’


তিনি বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দলের শুভাকাঙ্ক্ষী দলতো থাকতেই পারে। বিএনপির যেসকল নেতাকর্মীরা বিগত সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এখন যদি তারা একটি ব‍্যানারে সংগঠিত হয় তাহলে এটি মন্দ কী?’


সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আছে, তার বাইরে আমাদের আর কোন সংগঠন নেই। এই ১১ সংগঠনের বাইরে সবগুলো ভূয়া ও ভুঁইফোড়। 


অনুসন্ধানে ওঠে আসা ১২ সংগঠনের নাম বললে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সবগুলোই ভুয়া। আমরা কিছুদিন আগে দলীয় নেতাকর্মীদের সর্তক করে দিয়েছি এদের সাথে কোন রকমের যোগাযোগ না রাখতে। যদি বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের কেউ তাদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ‍ব্যবস্থা নিব।’


বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী  বলেন, ‘১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়া আর কোন বৈধ সংগঠন নেই। যারা রয়েছে তারা ভুয়া। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবেও সর্তক করে দিয়েছি এসব সংগঠনের সাথে বিএনপির কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাদের কোনো কার্যকলাপ বা অপরাধের দায়ভার বিএনপি নেবে না।’

এই সম্পর্কিত আরো