সিলেট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ‘তাহসিনা রুশদীর লুনা ও হুমায়ুন কবির’ বলয়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠিত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার জের ধরে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।
সকাল থেকে পৌর শহরের গূরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ছোট ছোট দলে পুলিশের অবস্থানের পাশাপাশি টহল টিমের নজরদারীও ছিলো লক্ষণীয়। তবে ওই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কোন পক্ষই থানায় কোন প্রকারের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নি।
এঘটনায় যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাজ্জাদ আলী শিপলী, ছাত্রদল নেতা মিনহাজ আহমদ, আব্দুর রহমানসহ উভয় পক্ষের আহতরা চিকিৎসা গ্রহন শেষে বর্তমানে সুস্থ অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাকে ষড়যন্ত্রকারীদের পাতা ফাঁদ উল্লেখ করে ফেস বুকে থাকা নিজের আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সিলেট-২ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেস্টা মন্ডলীর সদস্য ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা।
স্ট্যাটাসে তিনি বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরবাসীকে সালাম জানিয়ে উল্লেখ করেছেন, “বিশ্বনাথে গতরাতে (বৃহস্পতিবার) যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা হয়েছে, সেটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সবাইকে ধৈয্য ধারণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অনুরোধ করছি। ষড়যন্ত্রকারীদের পাতা ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। সকল প্রকার সংঘর্ষ এড়িয়ে নিজেদের কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছি। ধানের শীর্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার যে দায়িত্ব আপনাদের দিয়েছি সেটা নিষ্ঠার সাথে পালন করুন। কথায় বলে ‘যে সয়, সে রই’।”
অন্যদিকে গণমাধ্যমে প্রেরিত উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া স্বাক্ষরিত এক যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনাটিকে সাধারণ জনতার উপর হুমায়ুন কবির বলয়ের অর্তকিত হামলা উল্লেখ করে এঘটনায় ‘উপজেলা ও পৌর’ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়েছে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির আওতায় বিশ্বনাথ যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলের লিফলেট বিতরণ সম্পন্ন হয়। একই দিন উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের চড়চন্ডি গ্রামের একটি বাড়িতে বহিস্কৃতদের নিয়ে হুমায়ুন কবির একটি সভা করেন। সভা শেষে বিশ্বনাথ সদরে আসলে তার (হুমায়ুন) সঙ্গে থাকা বিএনপির সুহেল চৌধুরীসহ ভাড়াটিয়া লোক বাসিয়া ব্রীজে গাড়ি থেকে নেমেই দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ব্রীজে থাকা সাধারণ জনতার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সাধারন জনতার উপর এ ন্যাক্কারজনক হামলা পূর্ব পরিকল্পিত এবং শান্ত বিশ্বনাথকে উত্তপ্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস। আর নিরীহ জনতার উপর হামলা চলাকালে দূরে অবস্থান করা যুবদল, ছাত্রদল নেতারা এগিয়ে আসলে সুহেল চৌধুরী ও তার সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। নেতৃবৃন্দ সাধারণ জনতার উপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অন্যতায় বিএনপি বিশ্বনাথবাসীকে সাথে নিয়ে এ মিথ্যাচার ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে। আর উদ্ভট এ পরিস্থিতিতে বিশ্বনাথবাসী ও ইলিয়াস প্রেমীদের ধৈর্য্য এবং শান্ত থাকার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।
এঘটনার ব্যাপারে হুমায়ুন কবির বলয়ের শীর্ষ নেতা বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী দু’জনই (হুমায়ুন-লুনা) দলের পরীক্ষিত নেতা। তবে দলীয় ইঙ্গিত হুমায়ুন কবিরের দিকেই যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমরা দৌলতপুর ইউনিয়নে হুমায়ুনকে নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিই। কিন্তু লুনার অনুসারীরা সেই কর্মসূচিতে বাঁধা সৃষ্টির জন্য বিকল্প কর্মসূচি দিয়ে আমাদের নেতার গাড়িবহর বিভিন্ন স্থানে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা তখনও কোনো প্রতিবাদ করিনি। পরে রাতে দৌলতপুরে সভা শেষে ফেরার পথে লুনার অনুসারীরা গুন্ডাপান্ডা-সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এটি কোনো সুস্থ রাজনীতি নয়। দলের ভেতরে এভাবে একজন মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া রাজনীতির পরিপন্থী।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে গূরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশী টহল অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্বনাথ পৌর শহরের বাসিয়া সেতু ও থানার গেইটের সামনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ‘তাহসিনা রুশদীর লুনা ও হুমায়ুন কবির’ বলয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা সংগঠিত হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলা ওই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল এবং নতুন-পুরাণ বাজারের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এতে যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম,
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাজ্জাদ আলী শিপলী, ছাত্রদল নেতা মিনহাজ আহমদ, আব্দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এরপর থানা পুলিশ দু’পক্ষকে দুদিকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় পৌর শহরে সেনাবাহিনীর একটি দল টহল দেয়।