জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বাধীনতার পর জাতির জন্য সর্বোচ্চ অর্জন। এই অর্জনের জন্য ২ হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন ও ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এই রক্তের ঋণ পরিশোধের জন্য জাতি পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করবেনা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারীতেই জাতীয় নির্বাচন হবে। এর আগে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি দিতে হবে। এই দাবী শুধু জামায়াতের নয়, দেশপ্রেমিক জনতার। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবী করায় বলা হচ্ছে আমরা নাকি নির্বাচন চাইনা। অথচ এক বছর আগেই ২০০ আসনে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি। বড় দলটির একটি আসনে এখানো ১০ জনেরও বেশী প্রার্থী কাজ করছেন। প্রার্থী ঘোষণা করে দেখেন না ৩য় বিশ^যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। কেউ কেউ পিআর বুঝেন না। সময় গেলে এটাও বুঝবেন। কেয়ারটেকার পদ্ধতির মতো পিআর পদ্ধতিও এদেশে কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য হবে। জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি প্রদানসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবী মেনে নিন। অন্যথায় ফের গণআন্দোলনের সুচনা হবে।’
তিনি শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাদ জুমআ নগরীর কোর্ট পয়েন্টে জামায়াত কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কোর্টপয়েন্ট থেকে বিশাল গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টর প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে সিলেট মহানগর ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটের হাজার হাজার জনশক্তি অংশ নেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিনের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে (মহানগর ও সদর) জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।
বক্তব্য রাখেন- জেলা নায়েবে আমীর সিলেট-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, সিলেট-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আরো বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশন টানা ৮ মাস ধরে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেছে। কমিশনের অনেক প্রস্তাবের মধ্যে ৮৪টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। এছাড়া সংবিধানে জামায়াত প্রস্তাবিত জুলাই অধ্যাদেশ জারির ব্যাপারেও সবাই একমত হয়েছেন। এরজন্য গণভোটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব গণভোটের আয়োজন করা।
তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ভুল বুঝানো হচ্ছে। অথচ পিআর পদ্ধতি হলে বেশী ভোট কাস্ট হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে। জনগণের ভোটের সঠিত মূল্যায়ন থাকবে। তাই আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। স্বৈরশাসকের সাথে থাকা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জন আকাঙ্খা পূরণ হবেনা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, জনগণ ভিন্ন সময় বিভিন্ন দলকে নির্বাচিত করে তাদের শাসন দেখেছে। এবার তারা দাড়িপাল্লাকে বিজয়ী করতে চান। জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবী মেনে নিয়ে ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করুন। অন্যথায় ছাত্র-জনতার আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। একটি দলের নেতার পিআর বুঝেন না। কেয়ারটেকারের মতো পিআরও বুঝবেন। এজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে। আর কাউকে ফ্যাসিস্ট হওয়ার সুযোগ দেয়া হবেনা।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্লোগান শুনেছি। দলের চেয়ে দেশ বড়, ব্যক্তির চেয়ে দল। কিন্তু যখনই স্বার্থে আঘাত পড়ে যায় তখন সবকিছুর উপরে ব্যক্তি বড় হয়ে যায়। এই জাতিকে আর ধোকা দেয়া যাবেনা। যেনতেন নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ও জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবী মেনে নিয়েই সরকারকে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।