নবীগঞ্জে সরাসরি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনজন সাংবাদিককে 'মব'-এর মাধ্যমে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এক যুবক। এই ঘটনায় সিনিয়র সাংবাদিক এম.এ আহমদ আজাদসহ আরও দুই সাংবাদিক বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযুক্ত যুবকের নাম এমদাদুল হক এমদাদ, যিনি একটি ফেসবুক আইডি থেকে সাংবাদিক আজাদের ছবি এডিট করে পোস্ট করেছেন। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে হবে, নতুবা মবের মাধ্যমে হাত-পা ভেঙে থানায় দেওয়া হবে। এমদাদ নিজেকে ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি দাবি করলেও, নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে তিনি বর্তমানে ছাত্রদলের কোনো কমিটির সদস্য নন। তা সত্ত্বেও তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন রকম অনিয়ম ও চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, এমদাদের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং সেনানিবাসে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। তার গ্রামের মানুষও তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
গত ৪ দিন পূর্বে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে এমদাদ তার গ্রামে "বাবা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষণের" একটি মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে পুলিশের ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের খবর দেন। এই খবর পেয়ে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি এম.এ আহমদ আজাদ, শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহেদ এবং কোষাধ্যক্ষ রিপন আহমদসহ তিন সাংবাদিক এমদাদের গ্রাম জিয়াদিপুর কারারপাড়ে যান। পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন যে ধর্ষণের ঘটনাটি এমদাদের সাজানো নাটক।
সত্য উন্মোচিত হওয়ার পর সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার মুহূর্তে এমদাদ ও তার সঙ্গীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং মব সৃষ্টির জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। এতে সেখানে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলে এমদাদ আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। এই সুযোগে এমদাদ ও তার সাথীরা সাংবাদিক আজাদের মোটরসাইকেলের লক ভেঙে একটি হেলমেটসহ জোর করে নিয়ে যায়। পরে নবীগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হলেও হেলমেটটি ফেরত দেননি এমদাদ ও তার সঙ্গীরা।
গতকাল এমদাদ তার নিজের ফেসবুক আইডিতে সাংবাদিক আজাদের ছবি এডিট করে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, "সাংবাদিক আজাদের সাইকেল নিয়ে ছিলাম, এখন তাকে পেলে মবের মাধ্যমে হাত পা ভেঙে থানা পুলিশে দিবে।" রাতে পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পরপরই ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সকালে সাংবাদিক আজাদ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন।
এছাড়াও এমদাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তিনি নেছাওর মিয়া নামের একজন লন্ডন প্রবাসীর কাছে চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টি লন্ডন প্রবাসী নেছাওর মিয়া বানিয়াচং সেনা ক্যাম্পে জানালে সেখানে আপস-মীমাংসা করা হয়। লন্ডন প্রবাসী নেছাওর এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও, এমদাদ তার গ্রামের নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গালিগালাজ ও চাঁদা দাবির পর লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে নুরুল ইসলাম নবীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এমদাদ বালু মহাল থেকে অবৈধ ফায়দা না পেয়ে নবীগঞ্জের দুইজন সিনিয়র বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অকথ্য ভাষায় লাইভ করে গালাগালিও করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, "সে ছাত্রদলের কমিটিতে না থেকে নিজেকে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি দাবি করে আসছে, অবাক কাণ্ড! তার উশৃঙ্খল আচরণের জন্য মানুষ অতিষ্ঠ। একজন সাংবাদিকের হাত পা ভেঙে দিবে এটা অন্যায় কাজ, আমরা ছাত্রদল সমর্থন করি না।"
সাংবাদিক এম.এ আহমদ আজাদ বলেন, "৩০ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি, অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে। এই জন্য কি দালাল হয়ে গেলাম? সে পারলে প্রমাণ করুক আমি আওয়ামী লীগের কোনো কমিটির সদস্য। ছবি আর ভিওকার্ড এআই দিয়ে এডিট করা যায়। আমি বিগত ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনো পোস্ট করে থাকলে একটা স্ক্রিনশট দেখানোর অনুরোধ করছি।"
জিয়াদিপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, "আমি নিরীহ মানুষ, আমাকে মারপিট করা ও হুমকি দিয়েছে। লোক মারফত ও মোবাইলে গালাগালি করে বলছে বাড়াবাড়ি করলে পা ভেঙে দিবে। আমি থানায় মামলা করেছি, তার ভয়ে কেউ সাক্ষী দেয় না।"
নবীগঞ্জ থানার এসআই সুমন মিয়া বলেন, "আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। মোটরসাইকেলের কাগজপত্র সঠিক থাকায় গাড়ি মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।"
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কামরুজ্জামান বলেন, "এখনো কোনো অভিযোগ পাই নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।"