জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্খা ছিলো রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার। সেই সংস্কার বাস্তবায়ন না করে নির্বাচন আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকারের শামিল। জামায়াত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। তাই নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে কর্মসূচী পালন করছে। শুধু জামায়াত নয়, দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই দাবিতে আন্দোলন করছে।
তিনি বলেন, এই কর্মসুচী দেখে কেউ কেউ বলেন আমরা না কি নির্বাচন বানচাল করতে চাই। যারা সংস্কার মানেন না, জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি চায়না ও পিআর পদ্ধতি মানেনা, প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বাচন বানচাল করতে চায়। নির্বাচন বানচাল নয়, জনআকাঙ্খা বাস্তবায়নে সংস্কার কমিশন যাতে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে সেজন্যই আমাদের আন্দোলন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশে ফ্যাসিবাদের কবর রচিত হয়েছে। সুতরাং আর কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেয়া হবেনা। জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ জাতি জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতি নির্বাচনের দাবী পূরণ করেই ছাড়বে।
তিনি শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩ টায় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি প্রদান ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান পয়েন্ট প্রদক্ষিণ শেষে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে মহানগর ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটের হাজার হাজার জনশক্তি খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে অংশ নেন।
মিছিল পূর্ব রেজিস্ট্রারি মাঠের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী, সাবেক জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারী জাহেদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা মাসুক আহমদ, বিশ^নাথ উপজেলা আমীর নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি এডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সভাপতি এডভোকেট আলিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কি জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্খা ছিল। অন্তর্র্বতী সরকার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি বিশেষ দল নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যেনতেন উপায়ে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার ও ঐক্যমত্য কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত সেই বিশেষ দলের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সকল সংকট আলোচনার টেবিলে সমাধানে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সেভাবে না চাইলে রাজপথে সমাধানেও আমরা রাজি। জনমত যাছাই করতে চান তাও রাজী, গণভোট দিন। তবুও এই দেশে কাংখিত সংস্কার ছাড়া সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় দিয়ে কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেয়া যাবেনা।
তিনি আরো বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিনত করেছিল। আইন ও মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। ঠিক সেই সময় দেশের ছাত্র-সমাজ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদে দেশপ্রেমিক জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। যার ফলে স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত হয়। সিলেটের শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন ছিলেন হিন্দু এবং সিলেটের শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব ছিলেন একজন সাংবাদিক। কিন্তু তাদেরকেও জীবন দিতে হয়েছে। কারণ এটি ছিল ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থানের আইনী ভিত্তি ছাত্র-জনতার অধিকার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবি পূরণের বিকল্প নেই। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতন হয়েছে। নতুন করে আর কাউকে ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ দেয়া হবেনা।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্খার প্রকৃত বাস্তবায়নের স্বার্থে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি প্রদান শুধু জামায়াত নয়, দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার দাবী। অন্তর্র্বতী কালিন সরকারকে ছাত্র-জনতার আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়নে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল গণহত্যার বিচার, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবী মেনেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের রক্তের সাথে কোন উপহাস ছাত্র-জনতা মেনে নিবেনা।