ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যাত্রীদের কাছে এখন এক মহা দুর্ভোগের নাম। সিলেট থেকে ঢাকা যেতে ১০ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। সম্প্রসারণকাজ চলমান থাকার ফলে 'যানজট' নামের আতঙ্ক সামনে রেখেই যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জানা যায়, ২০৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে মাত্র ১৫ ভাগ। এখনো ৮৫ ভাগ ভূমি অধিগ্রহণ করার বাকি রয়েছে।
যদি আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তিনি ভূমি বুঝে পান তাহলে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন।
গত সপ্তাহে এ সড়কের নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে।
গত শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশ পরিদর্শনে আসেন।
মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ না হওয়ায় আটকে আছে মহাসড়কের কাজ। এতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।
তবে ওই বৈঠকে কাজের ধীরগতির কারণ নির্ণয়ের পর সড়কের কাজ এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে প্রকল্পের প্রধান ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা ফজলুল করিম সাংবাদিকদের কাছে সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছেন। এই সড়কটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালে। আর কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালে। প্রকল্পের- ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর-৬ লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’। ব্যয় ধরা হয়েছিল সবমিলিয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের জন্য ৭টি জেলা থেকে মোট ৮২৯ দশমিক ৮৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন।
সেখানে চলতি মাস পর্যন্ত একশ’ একরের মতো বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে জানান, ২০৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে মাত্র ১৫ ভাগ। এখনো ৮৫ ভাগ ভূমি অধিগ্রহণ করার বাকি রয়েছে। যদি আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তিনি ভূমি বুঝে পান তাহলে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন।
তিনি জানান, কেবলমাত্র ভূমি জটিলতার কারণে এই সড়কের নির্মাণকাজ আটকে আছে। ভূমি না পাওয়ায় সড়কের নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকরা বসে আছেন। তাদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। ভূমি সমঝে না পাওয়ার কারণে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে না।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এই প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৬০টি ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। ৩০৫টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
২০০’র বেশি কালভার্টের কাজ শেষ হওয়ার পথে রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি ফ্লাইওভারেরও কাজ করা হবে। দুইপাশে সার্ভিস লেনও নির্মাণ করা হবে।
এ ছাড়া সড়কটির টেকসইয়ের জন্য মডিফাই বিটুমিন ব্যবহার করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জন্য এডিবি ঋণ দেয়ার কথা ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সিলেট-তামাবিলে ২ হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ হিসেবে এআইআইবি’র কাছ থেকে পাওয়া যাবে। অবশিষ্ট ৬১৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।
এদিকে, গত সপ্তাহে বৈঠক শেষে নড়েচড়ে বসেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা জানান, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ করা ভূমি প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের কাছে সমঝে দেয়ার জন্য দ্রুত কাজ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এদিকে, ৬ লেন নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে ও ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রমে অগ্রগতি ফেরাতে মহাসড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছেন সিলেট জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম। এ সময় দ্রুত মহাসড়কের নির্মাণকাজ শেষ করতে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ বাস্তবায়ন করতে মহাসড়কের পাশে সরকারি জায়গা দখল উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।
গত শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশ পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনের সময় উপজেলার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হাজী মাসহুদ আলী মডেল ফিলিং স্টেশন পরিদর্শন করেন। ফিলিং স্টেশনটি ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে মহাসড়কের পাশে হওয়ায় সরকারি জায়গা দখলে রয়েছে কি না? তার সীমানা নির্ধারণ এবং পাশেই পিউরিয়া কনফেকশনারি দোকান দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি জয়গা থেকে সরাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া দয়ামীর ইউনিয়নের চকবাজার ও তাজপুর ইউনিয়নের কাশিখাপন পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে রোডের ৬ লেন কাজের গতি ঠিক রাখার জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা দখলমুক্ত রাখতেও নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নির্মাণকাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে ভূমি অধিগ্রহণ ত্বরান্বিত করতে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। আমরা সেই লক্ষ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।