শাবি প্রতিনিধি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ‘ছাত্রদলকর্মী’ শেখ ফাকাব্বিরের বিরুদ্ধে। ফাকাব্বির নিজেকে খুলনা সিটি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক ১নং সদস্য হিসেবে দাবি করেছেন এবং বর্তমানে তিনি শাবি ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম সরকারের কর্মী বলে জানা গেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা আবাসিক এলাকায় একটি মেসে থাকেন। রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ৪৩৬নং কক্ষে সৃষ্ট ঝামেলার জেরে এই পোস্ট করেন তিনি। পোস্টে শিবিরের পোলাপান তাকে কক্ষে আটকিয়ে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ করেন।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হল প্রভোস্টবডি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাকাব্বির ও ওই রুমের শিক্ষার্থীদের প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফাকাব্বির নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভন্তরীণ গ্রুপে আরেকটি পোস্ট দেন এবং পূর্বে ছাত্রশিবিরকে নিয়ে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ পোস্ট দিয়েছেন বলে দাবি করেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রস্তাবনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান।
জিজ্ঞাসাবাদে ফাকাব্বির বলেন, মেসের ওয়াইফাই বিলের টাকা নিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুষম সাহার সাথে দেখা করতে রাত ১০টার দিকে হলে আসেন তিনি। শাহপরাণ হলের ৪৩৬নং কক্ষে সুষমের রুমে এসে তাকে না পেয়ে তিনি তার রুমমেটদের সাথে কথাবার্তা বলেন। কথাবার্তার জেরে তাকে মারধর করা হয়। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করেন যে,‘ আমি সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। হলে মেসের টাকা নিতে গেলে শিবিরের ছেলেপেলে আমাকে কুপিয়ে জখম করে এবং এলোপাতারি মারধর করে রুমে আটকিয়ে রেখেছে।’
ফাকাব্বিরের এ বক্তব্যকে অস্বীকার করেছেন হলের ৪৩৬নং কক্ষের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম জানান, ‘রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাতে কেউ একজন নক না করে আমাদের রুমে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর সে অভদ্র ভাষায় আমাদের সাথে কথা বলে। তার পরিচয় পেয়ে বুঝতে পারি সে আমাদের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের জুনিয়র। তাকে বলি কারোর রুমে প্রবেশ করলে ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়। এ ছাড়া হাফ প্যান্ট পরে রুমে প্রবেশ করতে নিষেধ করি উত্তরে তখন সে আমাকে গালি দিয়ে বলে ‘আমি এভাবেই কথা বলি তুই যা পারিস করিস’।
তিনি বলেন, ‘এরপর তার সোয়েটারের ভেতরের পকেট থেকে ধারালো চাকু বের করে আমার গলায় ধরে এবং বলে তুই আমাকে চিনস আমি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী। তখন নিজেকে রক্ষার জন্য তাকে ধাক্কা দিই এবং বের হয়ে বাইরে থেকে রুম আটকিয়ে দিই। এরপর প্রক্টর স্যারকে জানালে গার্ডরা এসে বাকিদের উদ্ধার করেন।
একই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘আমিরুল নিজেকে বাঁচাতে বের হয়ে গেলে রুমে আমিসহ আরমান ও রাতিন আটকা পড়ে যাই। তখন ফাকাব্বির আমার গলার কাছে চাকু ধরে এবং ইউটিউব থেকে তার নিজের এলাকায় করা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিডিও দেখায়। এরপর সে নাঈম সরকার (ছাত্রদলনেতা) নামে একজনকে কল দেয় এবং বলে ভাই আমাকে শিবিবের পোলাপানরা ধরে আটকায় রাখছে। ’আপনি না আসলে আমাকে বলেন, আমি নিজের স্টাইলে তিনজনকে ফালায় দিয়ে বের হয়ে যাব।’ এরপর আমরা বের হয়ে গেলে সে নিজের উরুতে ছুরির আঁচড় দিয়ে আমাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয় এবং ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে স্যাররা এসে তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতা নাঈম সরকার বলেন, ‘ফাকাব্বির আমার পূর্ব পরিচিত। সে আমাকে কল দিয়ে বলছে, ভাই শিবিরের পোলাপান আমাকে মারছে ও আটকিয়ে রাখছে। তখন তাকে আমি বলেছি, আমি এখন সিলেটে নেই। তুই তোর বন্ধুবান্ধবদের খবর দে। তখন সে আমাকে ফেসবুকে পোস্ট দিবে কি না বলে। আমি তাকে তার আত্মরক্ষার জন্য পোস্ট দিতে বলেছি।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি এবং প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসি। ছাত্রশিবিরের জড়িতের বিষয়ে ছেলেটি যে অভিযোগ করেছে সেই অভিযোগ সে তুলে নিয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের কাজ চলছে।’