মুষলধারে বৃষ্টির জন্য হঠাৎ করে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে নবীগঞ্জের কুশিয়ারা ডাইকে ভাঙন আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ৩দিনেই নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাঁক আউশকান্দি ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার কয়েকশ একর ফসলি জমি ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে নদীর অপর পারে জগন্নাথপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে। ৩দিনে এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ১০/১৫টি পরিবার রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি কোন সংস্থা থেকে অসহায় পরিবারগুলোর সাহায্যে কেউ এগিয়ে না আসায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দীঘলবাঁক ইউপির সাবেক মেম্বার মোঃ ফরিদ মিয়া জানান, বর্ষায় ভাঙন দেখা গেলেও এখন হঠাৎ করেই কুশিয়ারার ঘূর্ণি স্রোতের আঘাতে এ ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম ভেঙে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। একদিনেই আধা কিলোমিটার এলাকার ধানী জমি কুশিয়ারার বক্ষে হারিয়ে যায়।
দীঘলবাঁক গ্রামের ডাঃ শাহ ইউসুফ আলী বলেন, মানুষ বাড়িঘরে হঠাৎ করে ভাঙ্গনের অগ্নিমুর্তি ধারন করে সরানোর সময়ও পাওয়া যায়নি। ভাঙনের ভয়াবহতায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ৬ অক্টোবর মালেক মিয়ার বাগানের প্রায় লক্ষাধিক টাকার গাছ বসতবাড়ি চোখের পলকে কুশিয়ারার তলিয়ে গেছে।
দীঘলবাক গ্রামের রফিক আলী বলেন, এক একটি চাঁকা (ভাঙ্গনের মাটির পরিমান) ধসে পড়ছে একটি ধানি জমি বা একটি বাড়ি নিয়ে । যেকোন মুহুর্তে আমাদের এলাকায় ১৫/২০টি গ্রাম বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে স্বাধীনতার পর থেকে ভাঙন ২৫টি গ্রামের ১২/১৩শ’ বাড়ির মধ্যে এখন মাত্র পাঁচ থেকে সাতটি পুরানো বাড়ি অবশিষ্ট আছে। তিনি বলেন, আমরার “সব কিছুই সর্বনাশী কুশিয়ারা খাইছে”।
আগামী দুই চারদিনের মধ্যে সেগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। জামার গাও গ্রামের রইছ আলীর পরিবার এখন ভাঙ্গনের কবলে পরে বাড়িঘর হারিয়ে পথের ফকির তারা পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে কুশিয়ারা বাঁধের উপর ছামিনায় বসবাস করেন। রইছের স্ত্রী করিমুননেছা বিবি বলেন স্যার আমাদের কাছে নদীটির লাগি আজ আমরা পথের ফকির কেমনে খাবো আর কেমনে চলবো পথ দেখছিনা।
শ্রীমঙ্গলে বাসা ভাড়া করে থাকেন দীঘলবাক গ্রামের বাসিন্ধা স্কুল শিক্ষিকা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন পৈত্রিক বাড়ি ঘর এলাকা ভেঙে যাচ্ছে ।তিনি বলেন, ভাঙনের এমন ভয়াবহতা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার আকুল মিয়া জানান, গত এক সপ্তাহে ওই এলাকার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের অনেক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের এলাকায় ভয়াবহ ভাঙ্গন চলছে, হঠাৎ বৃষ্টি আর পাহাড়ি পানি আসায় কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন চরম আকার ধারন করছে।
ফাদুল্লাহ জামারগাও বাসিন্ধা ও দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের গর্ভনিং বডির সদস্য আব্দুল বারিক রনি বলেন, নদী ভাঙ্গন এটা আমাদের পুরাতন রোগ, স্কুল কলেজ মাদ্রাস সবকিছুই নদী গর্ভে চলে গেছে। এখন আমরা নতুন করে কলেজ,স্কুল ও মাদ্রাসা কিছু দীঘলবাক গ্রামের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। এটার দেখার জন্য কত আবেদন করেছি কোন কাজ হচ্ছে না।
দীঘলবাঁক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ এর প্রধান শিক্ষক সালেহ আহমদ বলেন,গত ৬/৭ বছরের ভাঙ্গনের ফলে তার বিদ্যালয়টি ১০/১২ টি ভবন, ও বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ সম্পুর্ন জায়গা কুশিয়ারার পেটে চলে গেছে। নদী গর্ভে চলে যাওয়ার ফলে আমাদের উচ্চ বিদ্যালয় স্থানান্তর করে প্রায় এক কিলো মিটার ভিতরে চলে এসেছি।
ইদানিং আবারও হঠাৎ করে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। আর মুহূর্তের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা কুশিয়ারার তলিয়ে যাচ্ছে। “কুশিয়ারা নদী আমাদের জন্য ক্ষুদার্থ বাঘ”
স্থানীয় আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলাওয়ার হোসেন জানান, নবীগঞ্জ,জগন্নাথ পুর ও আজমীরিগঞ্জ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মানুষ কুশিয়ারা নদীর তীরে বসবাস করেন। গত এক সপ্তাহে কুশিয়ারা নদীর তীরের বসবাসকারী অন্তত দুই শতাধিক পরিবার ভাঙ্গনে বাড়িঘর হারিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছে।
দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ছালিক মিয়া বলেন, কুশিয়ারা নদী আমাদের জন্য অভিশাপ, এই নদীর ভাঙ্গনে কেউ কেউ আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছি আবার কেউ হয়েছেন ভুমি হীন। কুশিয়ারার ছোবল সবকিছু শেষ করে দিচ্ছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্ন্য়ন বোর্ডের নির্বাহী সহকারী প্রকৌশলী শামীম মাহমুদ হোসাইন বলেন,কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়কে জানানো হয়েছে।কুশিয়ারা ডাইকের অবস্থার ঝুকির মধ্যে রয়েছে এবং নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে এটা রক্ষার জন্য শুকনো মওসুমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।