সিলেট নগরীর জল্লারপার জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্বে মসজিদের আয়ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের আয়ব্যয় সংক্রান্ত কোন হিসাব না দিয়ে নিজের ইচ্ছেমত অর্থ ব্যয় করছেন। এনিয়ে নিয়ে মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ হিসাব চাইলেও মোতাওয়াল্লি রয়েছেন না দেওয়ার বিষয়ে অনড়। এ অবস্থায় যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কাও করছেন এলাকার লোকজন। এমনকি হিসাব চাওয়ায় এহছানুল হক তাহের নামে এক মুসল্লীকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারন ডায়রিও করা হয়েছে।
সিলেট নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত জল্লারপাড় জামে মসজিদ। মসজিদটি আমীরুল হোসেন ওয়াকফ এস্টেট হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে এই মসজিদের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুল ইসলামের ছেলে কে.এম.তফাজ্জুল হোসেন ইমন।
সম্প্রতি জল্লারপাড় এলাকার ফজলুল হকের ছেলে এহছানুল হক তাহের আয়-ব্যয়ের হিসাব চান মোতাওয়াল্লি ইমনের কাছে। তিনি প্রথমে মোতাওয়াল্লির কাছে মৌখিকভাবে আয় ব্যয়ের হিসাব চান। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন মোতাওয়াল্লির কাছে লিখিতভাবে হিসাব চাইতে বলেন। তাদের কথামত তাহের লিখিতভাবে হিসাব দেওয়ার জন্য একটি আবেদন নিয়ে যান মোতাওয়াল্লির বাড়িতে। এতে মোতাওয়াল্লি অনেকটা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি কোনভাবেই হিসাব দেবেন না এবং এটি তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেও সাফ জানিয়ে দেন। এমনকি পারলে তার কাছ থেকে হিসাব নেওয়ার হুমকিও দেন। একপর্যায়ে মোতাওয়াল্লি ইমন তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ১৮ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় সাধারন ডায়রি করেন এহছানুল হক তাহের। কোতোয়ালী থানার সাধারণ ডায়েরী (নং-১৯২৪ (১১) ২৪ করেন। ডায়রিতে তিনি উল্লেখ করেন, মোতাওয়াল্লি ইমন ২০১০ সালে শুরু হওয়া মসজিদের পূর্ন:নির্মাণের পর থেকে আজ পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব মুসল্লিদের কাছে প্রকাশ করেননি।
হিসাব চেয়ে না পাওয়ায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন তিনি। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আয় ব্যয় সংক্রান্ত কোন হিসাব মসজিদের কমিটি বা মুসল্লিদের কাছে দেওয়া হয়নি। মসজিদের উন্নয়নে ওই সময়ে কয়েক কোটি টাকার আয় এবং ব্যয় হয়। দীর্ঘ এই সময়ে মসজিদের আয় ও ব্যয়ের কোন হিসাব মুসল্লিদের কাছে কখনো প্রকাশ না করায় অনেকটা ক্ষুদ্ধ এলাকার লোকজন।
হিসাব না দেওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মসজিদের উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তিনি মসজিদের আয়ব্যয়ের হিসাবের সঠিক তদন্তের জন্য গত ১৮ নভেম্বর জেলা প্রশাসক, ২০ নভেম্বর ওয়াকফ পরিদর্শক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রনালয়, ২১ নভেম্বর ওয়াকফ প্রশাসক বাংলাদেশ ওয়াকফ ভবন, ২৪ নভেম্বর বিভাগীয় কমিশনার সিলেট ও ১১ ডিসেম্বর ধর্ম উপদেষ্টা বরাবর পৃথক পৃথক আবেদন প্রেরণ করেন।
অভিযোগ পত্রে তাহের উল্লেখ করেন, ২০১০ সালের ফেব্রয়ারি মাসের মসজিদের পুনর্:নিমাণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মসজিদের আয় ব্যয় সংক্রান্ত কোন হিসাব মোতাওয়াল্লী মুসল্লী বা কারও কাছে প্রকাশ করেননি। বিগত দিনে দেশ বিদেশের বিভিন্ন মানুষ মসজিদ নির্মাণে টাকা প্রদান করেন। মসজিদ নির্মানের জন্য ৯ টি দান বাক্সে উত্তোলিত টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদান, পুরাতন দোকানকোঠা বিক্রি, শবে বরাত, শবে ক্বদর, জুম্মাবার ও বিশেষ দিনের উত্তোলিত টাকা, দোকান ভাড়ার টাকাসহ কোন কিছুর হিসাব আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। উল্টো উত্তোলিত টাকা গণণা না করেই মোতাওয়াল্লী বস্তা ভর্তি করে নিজের বাসায় নিয়ে যান। কোথায় কত টাকা খরচ হয়েছে, কখন কত আয় হল সবকিছুই তার ইচ্ছে অনুযায়ী হয়। কেউ হিসাব জানতে চাইলে তাকে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে আবেদনে অভিযোগ করা হয়। একইভাবে ২০০৯ সালে আরেক মুসল্লি হিসাবের জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। তখনো সেই হিসাব দেওয়া হয়নি।
তাহের জানান মোতায়াল্লি সব সময় বলে বেড়ান এটি তাদের ওয়াকফ সম্পত্তি।অথচ মুসল্লিদেও টাকায় চলে চলছে মসজিদ। এ অবস্থায় তার পারিবারিক সম্পদ হয় কিভাবে এমন প্রশ্ন রাখেন তাহের।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জল্লারপার জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী কে.এম.তোফাজ্জুল হোসেন ইমন সাংবাদিকদেও বলেন, ২০১০ সাল থেকে যে হিসাবের কথা বলা হয়েছে সেটি আমার জানা নেই। এটি আগের কমিটির ব্যাপার। আমি ২০১৮ সাল থেকে মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের মসজিদের আয় ব্যয়ের প্রতি বছরের হিসাব ওয়াকফ এস্টেটে জমা দেওয়া হয়।
এমনকি সরকার নির্ধারিত ট্যাক্সও পরিশোধ করা হয়। টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন এটি সম্পূর্ণ একটি অপপ্রচার। ৫ আগষ্টের পর থেকে সবখানেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির একটি পায়তারা চলছে এরই একটি অংশ বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে মসজিদের প্রবীন সদস্য আলহাজ্জ বাবর বকস বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর। এই মসজিদের উদ্বোধন আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে। আমি সবার আগে হিসাব জানতে চেয়েছি। তারা বলেছেন হিসাব সব ঠিক ঠাক। মসজিদ কারো কাছে ঋণ গ্রস্ত নয়। এরপর আমি মসজিদের কাজের উদ্বোধন করি। এরপর থেকে অনেক টাকা উঠেছে। প্রতি শুক্রবার লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা উঠে। কিন্তু কোন হিসাব পাইনি। তাদের উচিৎ ছিল মসজিদের মুসল্লিদের কাছে হিসাব দেওয়া। এটি কোনভাবেই ঠিক হয়নি।
মসজিদের কোষাধ্যক্ষ প্রবীণ মুরব্বি আলহাজ মনজুর খান মনজু জানান, আমি নামেই কোষাধ্যক্ষ। এখন বয়স হয়েছে অনেক। তারা শুধু আমার কাছে একটি সাক্ষরের জন্য আসে। আর আমি সাক্ষর দেই। তবে কোন হিসাব দেওয়া হয়নি। তারা বলেছেন ওয়াকফ এস্টেটে তারা হিসাব দেন। এরবাইরে কিছু বলতে পারেন নি এই প্রবীণ মুরব্বি।
এ ব্যপারে ওয়াকফ এস্টেট সিলেটের পরিদর্শক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।