সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাদাপাথর পর্যটন ঘাটের খাস কালেকশনের প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, সেবাগ্রহীতাদের মামলা দিয়ে হয়রানি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জনমনে প্রশ্ন হরলাল সরকারের খুঁটির জোর কোথায়!
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একটি কর্মস্থলে একজন কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি সময় থাকার নিয়াম নেই। অথচ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হরলাল সরকার প্রায় ৬ বছর ধরে একই একই উপজেলায় রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এনিয়ে খোদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশসানে কর্মরতদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে মাসে যোগদান করে এখনো রয়েছেন। নানা অনিয়ম ও সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা গ্রহণ করে বিশাল সম্পদের মালিক এখন তিনি।
কখনো তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উচ্চারিত হলে অর্থ দিয়ে তিনি দফারফা করে ফেলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি টানা ৬ বছর কোম্পানীঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খুঁটি গেড়ে বসেছেন। আর সেই খুঁটির জোরে একের পর এক করে যাচ্ছেন অনিয়ম ও দুর্নীতি।
এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ভূক্তভোগীরা।
সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন ঘাটের খাস কালেকশনের টাকা উঠানোর দায়িত্ব রয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। সেই সুবাদে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পান উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হরলাল সরকার। সুযোগ পেয়েই ১ বৈশাখ হতে থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাদাপাথর নৌকাঘাট থেকে দৈনিক আদায় করা হয় লক্ষাধিক টাকা। ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার এই টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু হরলাল সরকার সার সহযোগী শামীম আহমদ ও শিবলুদের মাধ্যমে ব্যাংকে নিয়ম রক্ষার স্বার্থে কিছু টাকা জমা দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেন।
৬ বছরে হরলাল সরকার বিভিন্ন দিবস উৎযাপন উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও ক্রাসার মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
অভিযোগ আছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কোনো প্রকার হিসেব না দিয়ে নারায়ন দেব নাথ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হরলাল সরকার এসব টাকা আত্মসাত করেছেন। বিগত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হরলাল সরকার কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর চন্দ্র দাস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নারায়ন দেবনাথ এবং জসিম উদ্দিন সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার লক্ষে তার পছন্দমতো প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগদান করেন। তাদের কাছ থেকে হরলাল সরকার জনপ্রতি ১হাজার থেকে দেড় হাজার করে নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে এম সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির একটি কাজ প্রায় ১মাস ধরে হরলাল সরকার আটকে রেখেছেন এবং চাটিবহর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে ৪ মাস ধরে বেতন দিচ্ছেন না।
বিশেষ করে ভোলাগঞ্জ পর্যটনঘাটে ঘাস আদায়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সাবেক) সুনজিৎ কুমার চন্দ, লিখিত আদেশ দিয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগদান করেন। কিন্তু হরলাল সরকার তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীর মধ্যে তার পছন্দের লোক দিয়ে খাস কালেকশান করান এবং টিকেট জালিয়াতি করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হরলাল সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যা কিছু বলার ইউএনও স্যারের মাধ্যমে ডিসি স্যারের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমি এই বিষয়ে কোনও বক্তব্য দেবনা। ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন, তিনি সব জানেন।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদা সুলতানা বলেন, হরলাল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় তিনি তার পক্ষে বক্তব্য পাঠিয়েছেন ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে।