সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগসহ অনিয়মের প্রতিবাদে মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি’র একাংশের নেতাকর্মীরা।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসনের সামনে বিভিন্ন শ্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা।বিক্ষোভ ও হট্টগোলের কারণে জেলা প্রশাসক ও কাবিটা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির নির্দেশে পিআইসি গঠন কার্যক্রম স্থগিত করে উপজেলা প্রশাসন। এতে সাধারণ কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বিগত ২০১৭ সালে চৈত্র মাসে পাহাড়ী ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যার কারণে জেলার সবকটি হাওরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে গেলে তৎকালীন সরকারের নির্দেশনায় ২০১৮ সাল থেকে জেলার ছোট-বড় সবকটি হাওরে শুরু হয় ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে পিআইসি গঠন করে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শাল্লা উপজেলার সবকটি হাওরে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ২৪কোটি ৮২লক্ষ টাকার ১১৫টি পিআইসির প্রাক্কলন করে গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। এতে কৃষকরা আবেদনও করেন। এরপরই উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির কয়েকজন (ইউএনও’র মনোনীত) সদস্য জড়িয়ে পড়েন অর্থ লেনদেনের সাথে। এমন অভিযোগ করেন কয়েকটি পিআইসির সভাপতি। পিআইসি গঠনের চুড়ান্ত দিনে উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি জরুরি সভা করেন। কৃষকদের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগ মুহুর্তে উপজেলা বিএনপি’র একাংশের নেতাকর্মী ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একটি বিক্ষোভ মিছিল করে এর প্রতিবাদ জানান এবং নতুনভাবে পিআইসি গঠনের দাবি জানান তাঁরা।
এসময় উপজেলার ইছাকপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা শাহানূর মিয়া বলেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মাহবুব সোবহানী চৌধুরী ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১ টি পিআইসি দেবেন বলে উৎকোচ নেন। এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক শাল্লার ইউএনওকে বাপাউবোর সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মাহবুব সোবহানী চৌধুরী বিএনপি নেতা শাহানূরের দেয়া বক্তব্যটি মিথ্য ও বানোয়াট বলে দাবি করেন। এসবের কোনো কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে শাল্লা উপজেলায় নিয়োজিত বাপাউবো’র শাখা কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. রিপন আলী বলেন, হঠাৎ করে একটি হট্টগোল হয়েছে, তাই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তবে একটি পিআইসি অনুমোদন করে আজ ১৫ ডিসেম্বর কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম তারেক সুলতান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় কিছু বিক্ষিপ্ত জনতা পিআইসি গঠনে বৈষম্য ও অনিয়মের অভিযোগ এনে মিছিল করায় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অকাল বন্যার হাত থেকে শাল্লার আপামর কৃষকদের উৎপাদিত একমাত্র বোরো ফসলের নিশ্চয়তার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অস্বচ্ছতার বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর শাল্লা উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে “শাল্লায় পিআইসি বৈষম্যহীন দূর্নীতিমুক্ত নতুন কমিটি” দাবি করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাও. নাজমুল ইসলাম জাহিদ স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাবিটা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মামুন হাওলাদার পিআইসি গঠন কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত স্বীকার করলেও কারণ জানাতে পারেননি। জেলা প্রশাসক ও জেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না করার কারণে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। নীতিমালার মধ্যেই আবার কার্যক্রম শুরু করা হবে।