রং নম্বরে পরিচয় থেকে প্রেম আর মোবাইল ফোনে বিয়ে, কাবিননামা না থাকলেও প্রবাসের মাটিতেই সংসার করেছেন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে। যে কারণে হারিয়েছেন পূর্বের স্বামী সন্তান। শুধু তাই নয়, নিজের কষ্টার্জিত ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক প্রেমিক। সব কিছু হারিয়ে এখন স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেলেও কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পেতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন ভূক্তভোগি নারী।
জানা যায়, রাজশাহীর কানুর উপজেলার মালখীরা গ্রামের মৃত আলকু শাহের মেয়ে পপি বেগম। তার ছিল স্বামী, সংসার ও সন্তানাদি। কিন্তু অভাবেন তাড়নায় পরিবারে স্বচ্চলতা ফেরাতে ২০১৭ সালে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরবে পাড়ি জমান পপি বেগম। ২০১৯ সালে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের ছনখাইড় গ্রামের মৃত আবদুর রকিবের ছেলে সৌদি প্রবাসী বিল্লাল মিয়ার মোবাইল ফোনে রং নম্বরে পরিচয় হয় সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশী পপির সাথে। এ পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে এক সময় গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পপিকে বিয়ের প্রলোভন আর রঙ্গীন জীবনের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন বিল্লাল। তাতেও পপি বিয়েতে রাজি হন নি। পপিকে বিয়েতে রাজি করতে নানা কৌশল করেন প্রেমিক বিল্লাল। নিজের মোবাইলে পবিত্র কাবা ঘরের ভিডিও ধারণে কসম করে যে 'পপি তোকে আমি বিয়ে করে সংসার করব'। এই কসম করা ভিডিও বার্তা পপিকে পাঠায় প্রেমিক বিল্লাল। তাতেই মন গলে যায় পপির। বিয়েতে রাজি করিয়ে কিছুদিন পর দেশে ছুটিতে আসেন প্রেমিক বিল্লাল। ২০২০ সালের ২ আগষ্ট বিয়ের পিরিতে বসেন পপি ও বিল্লাল। তাও আবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। পপির বিশ্বাস সৃষ্টি করতে একটি জাল কাবিননামাও তৈরী করে সেটি নিয়ে ফের প্রবাসে যান বিল্লাল। সেবার প্রবাসে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দুইজন একসাথে বসবাস শুরু হয়। বিয়ে ও সংসারের বিষয়টি জানতেন পপির কপিলসহ আশপাশে বসবাসরত একাধিক প্রাবাসী বাঙালীরাও। পপিকে আরও আপন করে নিতে নিজের পরিবারের সবার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলান বিল্লাল। তাতে বিল্লালের প্রতি পপির বিশ্বাস আরও ভারি হয়ে উঠে। এরপর শুরু হয় প্রতারণার মুল নাটক, যার স্ক্রীপ্ট রাইটার ও পরিচালক ছিলেন বিল্লাল মিয়া। আর তার নির্দেশনায় শুধু স্যুটিং করেছেন পপি। নিখুত পরিচালক বিল্লালের চালাকী একটুও বুঝার ক্ষমতা ছিলনা স্বাক্ষর জ্ঞানহীন সহজ-স্মরল পপির।
জমি খরিদ করে পপির জন্য বাড়ি নির্মানের স্বপ্ন দেখান বিল্লাল। দেশে এসে বাড়ি নির্মাণের দৃশ্যগুলাও ভিডিও ধারণ করে পাঠাতে থাকেন স্ত্রী পপিকে। আর বিভিন্ন পন্থায় নিতে থাকেন পপির উপার্জিত টাকা। ততক্ষনে বিষয়টি টের পেয়ে পপিকে তালাক দেন তার সাবেক স্বামী। এখন ছয় বছরের উপার্জিত প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকা হারিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা তো দুরের কথা, খোজে বেড়াচ্ছেন নিজের কষ্টার্জিত সেই অর্থ।
পপি এখন নিজের ফোনে বেশ প্রমানাদিসহ তাদের বিশেষ মূহুর্তের ছবি ও ভিডিও নিয়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। বিল্লালের বাড়িতে গিয়েও ঠাঁই না পেয়ে নিয়েছেন আদালতের আশ্রয়। এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ আদালতে প্রতারণার মামলা দায়ের করলে মামলাটি তদন্তের জন্য ছাতক থানাকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তের দায়িত্ব পান থানার উপপরিদর্শক সিকান্দার আলী।
পপির বক্তব্যে ৩০-৩৫ লাখ টাকা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসলেও তদন্তে বিকাশ ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিল্লালের পরিবারকে পাঠানো ১২ লাখ টাকারসহ পপির বর্ননা অনুযায়ী অন্যান্য ঘটনারও
প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু আসামীরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে পপির স্বপ্নের বাড়িতে বসবাস করলেও পপি এখনও বনবাসে। জীবিকার জন্য করছেন মানুষের বাসায় কাজ। পাপি এই মুখ নিয়ে ফিরতে চান না সন্তানদের কাছেও।
অন্যদিকে বিয়ের আসরে বসার চেষ্টা করছেন পপির প্রতারক স্বামী বিল্লাল। এতে বিল্লালকে হারানোর পাশাপাশি কষ্টার্জিত অর্থ হারিয়ে নিরুপায় পপি বেগম এখন বিচারের অপেক্ষায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রেমিক বিল্লালের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার পরিবারের লোকজনরা জানিয়েছে যেহেতু আদালতে পপি মামলা করেছেন, তাই ওই বিষয়টি আদালত দেখবে।