সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এখনোও মাটির কাজ শেষ করা হয়নি। তবে পাউবো কাগজে কলমে ৮৫ ভাগ দেখানো হলেও হাওর পাড়ের সচেতন মহল ও হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতারা বলছেন সব লোক দেখানো। যেখানে কাজ শেষ করার কথা সেখানে এখনও মাটির কাজ হচ্ছে। আর কাজ সবোচ্ছ ৬০-৬৫ ভাগ হবে।
কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ই ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ / মেরামতের কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও এখনোও বেশি ভাগ বাঁধে মাটির কাজ চলছে, এছাড়াও হয়নি ক্লোজারের কাজও।
এদিকে সময়মত কাজ শুরু না করায় বাঁধ মজবুত হবে না তাই আগাম পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় হাওর পাড়ের কৃষক ও সচেতন মহলে উৎকণ্ঠা বাড়ছে,সাথে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শুধু তাহিরপুর উপজেলায় নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি বাঁধেই নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি। হয়নি বাঁধে নীতিমালা অনুযায়ী মেরামত ও নির্মান কাজ। ব্যাপক অনিয়মও হয়েছে পিআইসি গঠনেও। এছাড়াও কোনো কোনো বাঁধের নিচে বালু দিয়েও তৈরী করা হয়েছে অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের।
অভিজ্ঞমহলের ধারণা ইতোমধ্যে পাউবো’র হাওর রক্ষাবাঁধ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সরকারি বরাদ্দ মেরে খাওয়ার প্রকল্প হয়ে পড়েছে এবং তাঁরা মনে করেছেন,সরকার থেকে এ বিষয়ে বিশেষ তদন্তের ব্যবস্থা করে পাউবো’র কাঠামোগত এই দুর্নীতির প্রতিকার করা জরুরি।
এদিকে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি ও সময় মত কাজ শেষ না করার কারনে হাওর বাঁচাও আন্দোলন বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সুনামগঞ্জ জেলা শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার(২৭ ফেব্রুয়ারি) জেলার শাল্লা উপজেলার এক কৃষক অনিয়মের অভিযোগ তুলে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,পাউবো কর্মকর্তাসহ ১৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় ক্ষোভের সাথে জানান,এবার ফসল ঝুঁকিতে পড়বে আর এর দায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নিতে হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ফসলের কোনো ক্ষতি হলে পাউবো ডিসি অফিস ঘেড়াও করা হবে। ১২টি উপজেলায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করাও হবে।
জানা গেছে,তাহিরপুর উপজেলার ৪১, ৪৭,৪৮, ৪৯,৫০,৫১,৫২,৫৩,৫৪,৬২ নং পিআইসির কাজ ১৮-২৪ফেব্রুয়ারী শুরু হয়েছে। এছাড়াও জেলার অন্যান্য হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজও ধীর গতিতে চলছে। তাহিরপুর উপজেলায় ৭৬টি প্রকল্পে ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজের অগ্রগতি ৮৫ ভাগ। এ উপজেলার আড়াই কোটি টাকা বোরো ধান উৎপাদন হয়।
পিআইসিরা জানান,মাটি না পাওয়া ও বরাদ্দের অর্থ সময় মত না পাওয়ায় বাঁধের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে তারা সবোচ্ছ চেষ্টা করেছে কাজ শেষ করতে।
তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন জানান, মাটি না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। বর্তমানে বাঁধে কাজের গতি বেড়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
হাওর পাড়ের কৃষকগন জানিয়েছেন,মাটির কাজই শেষ করতে হলে কম হলে আরও কম হলেও এক সাপ্তাহ লাগবে। সরকারী বরাদ্দের টাকা পানিতেই যাবে। হাওরের জাঙ্গাল কেটে বাঁধের স্লোবে দায়সারা মাটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পুরন অক্ষত বাঁধ নতুন দেখাতে দেওয়া হচ্ছে মাটির প্রলেপ। বাঁধ গুলোর কাজ ঠিক মত হয়নি আর দায়সারা কাজ চলছে। যেখানে বাঁধ দেওয়ার কথা না সেখানেও দেয়া হয়েছে। এতে হাওরের ক্ষতি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জেলায় এবার ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অপরদিকে ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে ৬৮৬ প্রকল্পে বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ জন্য প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২৭ কোটি টাকা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম জানান,মাটির কাজ প্রায় শেষ। পাউবোর ডিজাইন অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। আর কাজ যাতে যথা নিয়মে হয় সেদিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা হাওরে বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মামুন হাওলাদার জানান, নানান কারনেই বাঁধের কাজে বিলম্ব হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আরও ৭ দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে।