হবিগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সাড়ে ১০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার উল্লেখিত টাকার সম্পদ ক্রোক ও ডিসিকে সম্পদের রিসিভার নিয়োগে জেলার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জেসমিন আরা বেগম আদেশ দেন বলে দুদকের হবিগঞ্জের আইনজীবী শামসুল হক আবু জাহির জানান।
আদালতকে দুদকের দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হবিগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যরা নামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। জাহিরের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ দুদকের হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয় অনুসন্ধান করছে বলে আবেদনে বলা হয়।
দুদক বলছে, সাবেক এই সাংসদের নামে ঢাকার গুলশানে এপার্টমেন্ট ও হবিগঞ্জ শহরে টাউন হল এলাকায় বাসাসহ নয়টি স্থাবর সম্পত্তির অর্জন মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা।
স্ত্রী আলেয়া আক্তারের নামে ৯৯ লাখ ১০ হাজার ১০০ টাকা, ছেলে ইফাত জামিলের নামে ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩০০ ও মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির ৬ লাখ ৫০ হাজার ১০০ টাকার সম্পদ রয়েছে।
এছাড়া ভাই বদরুল আলমের নামে রয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার ২২১ টাকার সম্পদ।
আবু জাহির নিজের ১ কোটি ৩৯ লাখ ২ হাজার ৭০৬ টাকা মূল্যের দুটি গাড়ি রয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে মেয়ে মুক্তির নামে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬২ টাকা, আবু জাহির ও ভাই আল আমিনের যৌথ নামে ২৬ লাখ ১১ হাজার ১১৪ টাকা ও আল আমিনের নামে ২৫ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
শেয়ার বাজারে ছেলে ইফাত জামিলের ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, মেয়ে মুক্তির ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৩ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।
আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে আবু জাহিরের ১৯ লাখ ২০ হাজার, স্ত্রী আলেয়া আক্তারের ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮, ছেলে ইফাত জামিলের ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৪ ও ভাই বদরুলের নামে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকার বীমা রয়েছে।
দুদক আদালতকে আরো জানায়, আবু জাহির ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১৯টি স্থাবর, দুটি যানবাহন, চারটি ব্যাংক হিসাব, দুটি শেয়ার একাউন্ট, নয়টি বীমা পলিসি, ১৭টি অস্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দুদক খবর পেয়েছে।
দুদক বলছে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিষ্পত্তির আগে উল্লিখিত সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় ডিসিকে সম্পত্তির রিসিভার নিয়োগ করা জরুরি।
দুদক হবিগঞ্জের সহকারী পরিচালক এরশাদ মিয়া বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় উল্লিখিত সম্পদের বিবরণ পাওয়া গেছে। তদন্তে হয়তো আরও তথ্য বের হয়ে আসবে। অনুসন্ধান শেষে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হবে।
৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শহরে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করলে আবু জাহিরের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এ সময় আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা টাউন হল সড়কে আবু জাহিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। এভাবে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল আবু জাহিরসহ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর পর থেকে আবু জাহির ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।