সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, নবীনবরণ ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান রহস্যজনক কারণে স্থগিত করা হয়েছে। দাওয়াতপত্র ছাপিয়ে বিতরণের পর মঞ্চ প্রস্তুতসহ অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরও হয়নি অনুষ্ঠান। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সোমবার (২০ জানুয়ারি) পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। এটা পরিবর্তন করে ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অনুষ্ঠান স্থগিতের সঠিক কোনো কারণ জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও সেটা স্থগিত করে ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তুতি সমস্যার কারণে অনুষ্ঠানের তারিখ বদল হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা স্থগিত হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এনিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সর্ব মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু নোমান মো. শফিকুর রহমানকে সভাপতি করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাখা হয়েছিল সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিনকে।
অপর একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবারের অনুষ্ঠান আকস্মিক স্থগিত ঘোষণা করেন প্রধান শিক্ষক। ২৩ জানুয়ারি নতুন করে অনুষ্ঠানের সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ অনুষ্ঠান স্থগিত করায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সোমবার অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে এসে হতাশ হয়ে ফেরত গেছেন।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিহাদুল তালুকদার বলেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আমরা গত ১৫ দিন ধরে রিহার্সেল দিচ্ছি। হঠাৎ শুনি অনুষ্ঠান স্থগিত। এতে আমরা হতাশ হয়েছি।
বিদ্যালয়ের অন্যান্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও একইভাবে তাঁদের হতাশা ও ক্ষোভের প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক শিক্ষক বলেন, ১৯ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এসে আকস্মিক অনুষ্ঠান স্থগিতের ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানের সব ঠিকটাক। স্কুলে কেউ মারাও গেছে না, পরিবেশও ভালো, শুধু চূড়ান্ত ঘোষণা হওয়ার বাকি। এসময় অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কি এমন কারণ থাকতে পারে বিষয়টি বোধগম্য নয়।
অনুষ্ঠান স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, অফিসিয়ালি এটা হেডস্যার অফ করছে। অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়াতে বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কষ্ট পেয়েছে। বাচ্চারা হতাশ হয়েছে। স্কুলের প্রোগ্রাম তাঁরা বাতিল কখনো দেখেনাই। অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়াতে আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে। হেডস্যার যদি জেলা প্রশাসকের সাথে কোনো বিষয়ে সমন্বয় না করেন এর দায় পুরো প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে কেনো। স্কুলের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। এতে বাচ্চাদের উপর প্রভাব পড়ছে, মানসিকভাবে তাঁরা অনেক কষ্ট পেয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আবু নোমান মো. শফিকুর রহমান বলেন, অনুষ্ঠান ২৩ জানুয়ারি হবে। আমাদের কিছু প্রস্তুতির সমস্যা ছিলো এজন্য তারিখটা চেইঞ্জ করছি শুধু। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রস্তুতি সমস্যা ছিলো এজন্য ২০ তারিখের বদলে ২৩ তারিখে নেয়া হয়েছে। আজ ২১ তারিখে ছিলো মিলাদ। পাশাপাশি দুটো অনুষ্ঠান হওয়াতে প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হয়েছিলো।জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয়হীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, এটা সাক্ষাতে বলতে পারবো, ফোনে বলতে পারবো না।
সোশাল মিডিয়ায় এক ভিডিও বার্তায় জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জের জুবিলী হাইস্কুল খুব ঐতিহ্যবাহী স্বনামধন্য একটি স্কুল। এই স্কুলের যে অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে পূর্বেও আমার সাথে কোনো ধরণের আলোচনা করা হয়নাই। যে সময় অনুষ্ঠানটা সেট করা হয় এবং যে অনুষ্ঠানটা বাতিলের কথা বলা হয়েছে, বাতিলের সময়ও আমার সাথে কোনো ধরণের আলোচনা করা হয়নাই। তবে জেলা প্রশাসক হিসেবে এবং আমি ছাত্রের বাবা হিসেবে আমি বলতে পারি যে এই অনুষ্ঠানটা স্থগিত করা অনুচিত হয়েছে।
শিক্ষকদের সাথে তো আমার কথা হয়নাই তবে হেডমাস্টার সাহেব আমাকে আজকে (২০ জানুয়ারি) সকালবেলা জানিয়েছে অনুষ্ঠানটা স্থগিত করা হয়েছে। আজকেই অনুষ্ঠান ছিলো। এই বিষয়ে আমার করার কিছু ছিলোনা। কারণ উনি অলরেডি ডিসিশন নিয়েই এসেছে। আজকে কিছুক্ষণ আগে আমি জানতে পারলাম উনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোটিশ দিয়ে দিয়েছে।