রংপুরের সাবেক (সাময়িক বরখাস্ত) পুলিশ সুপার (এসপি) শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন রংপুর-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু।
তার দাবি, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গোপনীয়’ লেখা কিছু ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছড়িয়ে দিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রার্থীদের হেয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি এবং পুলিশের কিছু কর্মকর্তাকে জড়িয়ে তৈরি করা হয়েছে ভুয়া গল্প।’
সুত্রপাত যেভাবে: গত দুইদিন আগে বিষয়টি সামনে আসে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের ফ্র্যান্স প্রবাসী অনলাইন এক্টিভিটিস এর ফেসবুক পোষ্টে। তিনি সর্ব প্রথম পোষ্ট করার পরেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সামুর অভিযোগ, এই গোপন প্রতিবদনের পেছনের কারিগর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রংপুরের সাবেক এসপি শিবলী কায়সার।
নানা অনিয়ম ও চাঁদা দাবির দায়ে বর্তমানে রংপুরের সাবেক এ এসপি শিবলী কায়সার সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। এর আগেও তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) এমন অভিযোগ করেন সামু।
তিনি বলেন, একজন নারীর কাছে চাঁদা দাবির ঘটনায় এসপি শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি নানাভাবে আমার নামে বিভিন্ন বিভ্রান্তকর কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাকে নির্বাচনে জিততে দেবেন না- এমন কথাও বলছেন। আবার আমাকে জড়িয়ে ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছেন। সেখানে বলা হচ্ছে- ওবায়দুল কাদের এবং বিপ্লব সরকারকে আমি টাকার বিনিময়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করি। এমন কল্পকাহিনি ছড়িয়ে তিনি আমার নির্বাচনি ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।’
সামু বলেন, একজন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসপি কীভাবে এসব কাজ করেন। আমি এসবে ভয় পাই না। আমি একজন রাজনীতিবিদ। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের সম্পৃক্ত করে মিথ্যাচার করছেন শিবলী কায়সার। তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দফতরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন তিনি। বিষয়টি সার্বিক তদন্ত করে শিবলী কায়সারের শৃঙ্খলা ভঙ্গে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, গত ১১ মার্চ পুলিশ সদর দফতরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন রংপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী করিম উদ্দীন ভরসার পুত্রবধূ লিপি খান ভরসা। এর দুদিন পর লিপির পক্ষে তার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা রংপুর কোতয়ালী থানায় শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে গেলে তাকে শিবলী মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এর মধ্যে ১৬ মার্চ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়কার একটি মামলায় লিপিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, বেসামরিক ব্যক্তির প্রতি তার এমন উগ্র আচরণ ও আক্রোশ থাকায় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকায় তিনি কর্মরত থাকলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
শিবলী কায়সার ২৮ বিসিএস ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা বাবা ছেলেকে উল্টো থানা হেফাজতে পাঠিয়ে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসপি শিবলী কায়সার জানান, আমি গোয়েন্দা রিপোর্ট পুলিশ হেডকোয়াটার্সে করি। বিএনপির এমপি প্রার্থী সামসুজ্জামান সামু আ.লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পুলিশের এসপি বিপ্লব সরকারকে রংপুর সীমান্ত দিয়ে পালাতে সহযোগিতা করেছেন।
তিনি আরোও বলেন, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গোয়েন্দা রিপোর্ট অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
