বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বলেছেন, দল থেকে মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার অপেক্ষায় থাকব না, মনোনয়ন ঘোষণার সাত দিনের মধ্যেই গোয়াইনঘাট হাসপাতাল অপারেশনাল (কার্যকর) করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমি হাওয়াই কথা বলি না, কাজের কথা বলি। আল্লাহ যদি তৌফিক দেন এবং মনোনয়ন পাই, তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিধিনিষেধের দোহাই দিয়ে উন্নয়ন আটকে রাখা হবে না।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠন আয়োজিত হাদারপার বাজারে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ‘৩১ দফা’র লিফলেট বিতরণ ও জনমত তৈরির লক্ষ্যে এই পথসভার আয়োজন করা হয়।
সিলেট-৪ আসনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট জামান বলেন, ‘অন্যান্য আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও এখানে এখনো তা হয়নি। এখানে হাকিম সাহেব, মরহুম দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী, হেলাল সাহেব, আরিফুল হক চৌধুরী ও মিফতা সিদ্দিকীসহ অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন। তবে আমি এই জনপদে ২৮ বছর ধরে কাজ করছি। ২০১৮ সালে আমি ও মরহুম দিলদার হোসেন সেলিম দুজনেই প্রার্থী ছিলাম। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা হওয়ায় আমি তাকে ছাড় দিয়েছিলাম। সেই ত্যাগের কারণে এবং দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় আমি মনে করি, এবার আমিই মনোনয়নের প্রধান দাবিদার।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছরের শাসনের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশে একটি স্বৈরশাসন চেপে বসেছিল। গুম, খুন ও গায়েবি মামলা দিয়ে মানুষকে জর্জরিত করা হয়েছে। ২০১০ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর বিচারে ২০২৪ সালে সেই স্বৈরাচারকেই ছাত্র-জনতা দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, হেফাজতের শাপলা চত্বরের সমাবেশে আলেম-ওলামাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। ভোটের অধিকার হরণ করে বাক্সে আগে থেকেই সিল মেরে রাখা হতো। এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থার প্রতিবাদ করায় সিলেটের কৃতী সন্তান জননেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। শোনা যায়, তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের পাথর ও খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ এই অঞ্চলকে ‘গরিব’ আখ্যা দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যাডভোকেট জামান বলেন, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর অঞ্চল খনিজ সম্পদে ভরপুর। এখান থেকে সবাই শুধু টাকা কামাতে আসে, কিন্তু উন্নয়ন করে না। এই ধনী অঞ্চল থেকে সম্পদ শুষে নিয়ে একে গরিব করে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা এতই নাজুক যে, মা-বোনদের সাধারণ চিকিৎসার জন্য বা ছোটখাটো সেলাইয়ের জন্যও সিলেটে ছুটতে হয়। বিগত দিনের জনপ্রতিনিধিরা এখানে একটি ৫০ শয্যার হাসপাতালও চালু করতে পারেননি।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে ১৫ দিনের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ১৬তম দিনে রাস্তার কাজ শুরু করব। ইঞ্জিনিয়ার বা আমলারা যাতে কাজে ফাঁকি না দিতে পারে, সে বিষয়ে আমি কঠোর থাকব।
আগামী নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। সভায় স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত করে অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান।