গোয়াইনঘাটের ৯নং ডৌবাড়ী ইউনিয়নের কাঁটালকুড়ি কান্দি গ্রামে খাস গোচারণ ভূমি দখল করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভূমিখেকো চক্র জোরপূর্বক খাস জমি দখল করে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও চক্রের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
কাঁটালকুড়ি কান্দি মৌজার জালাল উদ্দিন ও তার সঙ্গীয়দের বিরুদ্ধে খাস গোচারণ ভূমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ এনে এলাকাবাসীর পক্ষে মো. আব্দুল মতিন ২৭ অক্টোবর গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর পৃথক অভিযোগ দাখিল করেন। প্রতিকার না পেয়ে ৬ নভেম্বর সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে নালিশা দরখাস্ত দিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সদস্য পলাতক সুভাসের ঘনিষ্ঠ লোক জালাল উদ্দিন। স্থানীয়দের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গোচারণ ভূমিতে ঘরবাড়ি তৈরির ঘোষণা দিয়ে সম্প্রতি তিনটি ট্রাক্টর চালিয়ে জমিগুলোর আইল ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। এই জমিতে এলাকার শত শত গরু-ছাগল চরে বেড়ায় এবং এই জমির ওপর নির্ভর করেই বহু পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। পূর্বপুরুষরাও এই জমি গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের কাঁটালকুড়ি কান্দি মৌজায় ১৬২.১৪ একর পরিমাণের একটি গোচারণ খাস জমি রয়েছে, যা জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডকৃত। এই জমি কাঁঠালকুড়ি কান্দি, হাতিরকান্দি, সাতকুড়ি কান্দি, তুরালিকান্দি, ডাকাতিকান্দি, নিহাইন সহ মোট ছয়টি মৌজার গরু-মহিষ চারণের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং একাংশে এলাকাবাসী যৌথভাবে বোরো ধান ফলিয়ে থাকে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জালাল সিন্ডিকেট কিছুদিন আগে জোরপূর্বক জমিতে ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্যে রড, সিমেন্ট, ইট, পাথর, বালু, টিন, বাঁশ ও কাঠসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী এনেছিল। ৯ আগস্ট এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে জালাল সিন্ডিকেট দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। স্থানীয় মুরব্বীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরও জালাল ও তার লোকজন জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করতে চাচ্ছে। এলাকাবাসী গণ্যমান্য মুরুব্বিদের কাছে বিষয়টি জানালে তারা আইনি আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
অভিযোগকারীরা জানান, জালাল বাহিনী কর্তৃক ঘর নির্মাণ করা হলে একদিকে যেমন তাদের গরু-মহিষ চারণে মারাত্মক অসুবিধা হবে, অন্যদিকে তাদের যৌথ বোরো ক্ষেতের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হবে। এ অবস্থায় সরকারি গোচারণ জমি রক্ষার্থে এবং তাদের গরু-মহিষ চারণের সুবিধার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে দরখাস্ত দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই জমি নিয়ে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা (৩৮৪/২৩) দায়ের হয়েছিল। সরেজমিন তদন্ত করে জানানো হয়, নালিশা ভূমি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার মানিকগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতাধীন এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক সিলেটের নামে রেকর্ডকৃত। পরবর্তীতে বাদী পক্ষ উপস্থিত না থাকায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়, এটা সরকারের বিষয়। তবে তিনি হামলা ও প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এরকম কোনো কিছু হয়ে থাকলে থানা-পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে, কারণ এই জায়গার মালিক সরকার।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী জানান, সরকারি জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ করা আইন বিরোধী। যারা এসব কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।