সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন শতাধিক নারী। এসব নারী উদ্দোক্তাদের খামার থেকে প্রতি মাসে চার টন সার উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
জানা যায়, উপজেলার কারিতাস সিলেট অঞ্চলের (ইএলএসআরপি) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণীরা ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির খামার গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে ২০ জনেই নারী উদ্দোক্তা কৃষাণী। তারা নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন।
সরজমিনে ভীমখালী ইউনিয়নের ছেলাইয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মুসলিমা আক্তার তার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির কারখানা। এক সময়ের নিত্য অভাবকে জয় করে এখন সে স্বাবলম্বী। কথা হয় গৃহবধূ মুসলিমা আক্তারের সাথে। তিনি জানান, এক সময় ১০ টি টাকার দরকার হলে স্বামীর কাছে ধরনা দিতে হতো। ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে এখন তিনি স্বাবলম্বী। এখন তিনি নিজের সংসারে টাকা খরচ করে সম্মানিত বোধ করছেন। সেই সাথে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন।
উপজেলা কারিতাস সংস্থার (ইএলএসআরপি) প্রকল্পে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সহযোগিতায় ৮ টি বড় সিমেন্টের তৈরি গামলা এবং দেড় বান টিন পাওয়ায় সেখানে চাপটা বেঁধে সেই গামলায় ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। মুসলিমা আক্তারের মতো আরো শতাধিক নারী কৃষাণী সার তৈরি করছেন। তার এই সার বিক্রয় করতে কোন ঝামেলা হয় না। কৃষকেরা তার বাড়ি থেকে এসে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যায়। এই উপজেলায় মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। উন্নতমানের জৈব সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি প্রকৃতির জন্যও উপকারি। কারিতাসের সহযোগিতায় বর্তমানে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে অনেকেই এগিয়ে আসছে।
উপজেলার শেরমস্তপুর নজাতপুর গ্রামের রুবিনা আক্তার জানান, কলা গাছ, কচুরিপানা, গোবর ও কেচু দিয়ে এক মাস রেখে দেওয়া হয় গামলায়। প্রতি এক মাস পর পর কেজিতে মেপে পলিথিনে প্যাকেট করে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করা হয়। হাতের কাছে ভাল সার পাওয়ায় কৃষকেরা কিনে নিয়ে বিভিন্ন রকম সবজি আবাদ করছে। এতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই সারের চাহিদা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো জানান, কারিতাসের সহযোগিতায় আমি ৮ টি বড় সিমেন্টের গামলা পাই এবং বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজির বীজ দেওয়া হয়। এই বীজ বাড়ির চর্তুদিকে লাগিয়েছি। যা নিজের চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশে লোকজনের কাছে বিক্রি করা যাচ্ছে। আমি প্রতি মাসে প্রায় তিন মন ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি করতে পারি। এতে আমার খরচ হয় সব মিলিয়ে প্রায় ৬ শত টাকা। বিক্রি হয় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। আমার এই কম্পোস্ট সার উৎপাদন দেখে অনেকেই আগামীতে খামার করার চিন্তা করছে।
কারিতাস সিলেট অঞ্চলের জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা স্বপন নায়েক জানান, এই উপজেলায় শতাধিক নারী কৃষাণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও কেচু সার ও বিভিন্ন শাক-সবজি চাষাবাদের জন্য সবজি বীজ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০ টির মতো ভার্মি কম্পোস্ট ও কেচু সার খামার থেকে সার বিক্রি করে কৃষাণীরা লাভবান হচ্ছে। এবং আরো শতাধিক কৃষাণী তাদের ভার্মি কম্পোস্ট ও কেচু সার তৈরি করে নিজেদের জমিতে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা জানান, সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কৃষাণ-কৃষাণীদের মানোন্নয়নে এগিয়ে আসছে। তারেই ধারাবাহিকতায় উপজেলায় কারিতাস সংস্থা কৃষক-কৃষাণীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি কাজে সহায়তা করে আসছে। এই সংস্থাটি ভার্মি কম্পোস্ট ও কেচু সার তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা করে আসছে। যার কারণে অনেক কৃষাণ-কৃষাণী পরিবারে চাহিদা মিটিয়ে তাদের তৈরিকৃত সার বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।