সিলেট আবারও প্রমাণ করলো-তাদের ক্রিকেট শুধু মাঠেই নয়, ম্যানেজমেন্টেও নতুন ইতিহাস লেখে। দীর্ঘদিন ধরে অলক কাপালী, রাজিন সালেহ থেকে শুরু করে নাসুম আহমেদ ও তানজীম হাসান সাকিব-এক প্রজন্মের পর আরেক প্রজন্ম জাতীয় ক্রিকেটে সিলেটের সুনাম বহন করেছে। ঘরোয়া লিগেও তারা সবসময়ই শক্তিশালী।
তবে এবারের ঘটনা ভিন্ন। উইমেন্স ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ১৪তম আসরে সিলেট নারী দলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সেলীনা আক্তার চৌধুরী—সিলেট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী। ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা, দলের প্রতিদিনের সমন্বয়—সব ক্ষেত্রেই এখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
সেলীনা আক্তার, দেশের প্রথম হাইপারলোকাল অনলাইন গণমাধ্যম সিলেট ভয়েস এর প্রকাশক এবং সিলেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট অঙ্গনে সক্রিয়। প্রায় আট বছর ধরে সিলেট সুরমা ক্রিকেট একাডেমি-র যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। নারীদের খেলাধুলা, বিশেষ করে ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এবার ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগ (NCL)-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের পথে এগোতে শুরু করেছে।
সেলীনা আক্তার বলেন-সিলেটের মেয়েদের প্রতিভা আছে, কিন্তু সুযোগ এবং অনুশীলনের পরিবেশ নেই। তিনি জানালেন, ছেলেদের জন্য সিলেটে একাধিক ক্রিকেট একাডেমি থাকলেও মেয়েদের জন্য কোনো টেকসই কাঠামো নেই, যা তাদের পিছিয়ে রাখছে।
তার স্বপ্ন সিলেটে নারী ক্রিকেটারদের জন্য পূর্ণাঙ্গ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে থাকবে বিশেষায়িত কোচিং, নিয়মিত ম্যাচ আয়োজন, পুষ্টি এবং মানসিক প্রশিক্ষণসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। একাডেমি গড়ে উঠলে সিলেট থেকে নিয়মিত নারী ক্রিকেটার জাতীয় দলে উঠতে পারবে।
এনসিএল বিভাগের ভিত্তিতে দলগুলো গঠন করা হয়, এবং খেলোয়াড়দের বেশির ভাগকে নিজ এলাকার হতে হয়। ৮ নভেম্বর মিরপুর বিকেএসপিতে শুরু হওয়া এবারের আসর চলবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত। সিলেট দলে জায়গা পেয়েছেন শারমিন আক্তার সুপ্তা, শামীমা সুলতানা, রিয়া আক্তার শিখা, অরিত্রি নির্জনা মণ্ডল, সাথী রানী বর্মন, নুসরাত জাহান সামান্তা, শারমিন আক্তার ছোয়া, পূজা চক্রবর্তী, লাবণী আক্তার এবং আফরিন আক্তার মীম।
সেলীনা আক্তার চৌধুরী সীমান্তবর্তী উপজেলার জকিগঞ্জের গনিপুর গ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম আব্দুল মোক্তাদির চৌধুরী ছিলেন সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, এবং মা আমেনা বেগম ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ও মূল্যবোধসম্পন্ন নারী। চার ভাইবোনের মধ্যে বড় হওয়ায় শৈশব থেকেই নেতৃত্বগুণ ও দায়িত্ববোধে তিনি ছিলেন আলাদা।
সেলীনার স্বামী আবুল কালাম সিলেটের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, যিনি মেসার্স আবুল কালাম নামে একটি আমদানি–রপ্তানি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিন সন্তান নিয়ে এই দম্পতি সিলেটের সমাজ ও ব্যবসায়িক অঙ্গনে সুপরিচিত।
বর্তমানে সেলীনা আক্তার সিলেটের ক্রীড়া ও সামাজিক অঙ্গনের এক বহুমুখী নেতৃত্ব। তিনি সিলেট সুরমা ক্রিকেট একাডেমির যুগ্ম সেক্রেটারি, বাংলাদেশ স্পোর্টস সাপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের আহবায়ক, ইকো ক্রিকেটার্স ফাউন্ডেশনের পরিচালক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রযোজক, রোটারি ক্লাব অব সিলেট মিডটাউনের প্রেসিডেন্ট এবং সিলেট উইমেন্স জার্নালিস্ট ক্লাবের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এনসিএলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।