সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

২০০ শিক্ষার্থীর রোবোটিকস কর্মশালা

যুক্তরাষ্ট্রের রোবোবোট প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে বাংলাদেশি দল

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এখন শুধু স্বপ্ন দেখে না, তারা সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে জানে। বঙ্গোপসাগরের গভীর নীল জলে যখন লুকিয়ে আছে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির সম্ভাবনা, তখন সেই সমুদ্রজয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে একদল তরুণ শিক্ষার্থী। রোবোটিকস প্রযুক্তির মাধ্যমে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ২০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী এক অনন্য রোবোটিকস কর্মশালা। আয়োজনে ছিল টেক অটোক্র্যাটস ও তাদের শিক্ষার্থী দল ‘টিম বেঙ্গলবোট’, যারা আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ ‘RoboBoat 2026’ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে বঙ্গোপসাগর। এই বিশ্বাস থেকেই নীল অর্থনীতি ও জল–প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে টিম বেঙ্গলবোট। তারা তৈরি করেছে একটি স্বয়ংক্রিয় পৃষ্ঠভাগীয় নৌযান বা ASV (Autonomous Surface Vehicle), যার নাম দিয়েছে ‘তরী ১.০’। বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকার নাম থেকেই এসেছে এর নাম। এই ‘তরী’ একদিন নীল জলরাশিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়াবে -এমন স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে দলটি।

শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া হাই স্কুলে আয়োজিত এই কর্মশালায় ২০০ শিক্ষার্থী হাতে–কলমে শিখেছে রোবোটিকসের মৌলিক ধারণা। সার্কিট বোঝা, সেন্সর ব্যবহার, কন্ট্রোল সিস্টেম, এমনকি ছোট ডেমো রোবট চালানোর সুযোগ পেয়েছে তারা। সাথে জলপথে স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন, বাধা শনাক্তকরণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও ছিল বাস্তব প্রদর্শনী।

ঢাকা মোহাম্মদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাপিয়া বাসার সুহানি জানায়, “এখানে শ্রীমঙ্গলে আমরা রোবোটিকসের প্র্যাকটিক্যাল দিকগুলো শিখেয়েছি। ভবিষ্যতে তারাও যাতে রোবোসাব বা রোবোবোটের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে।

রেডিসিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আন না ফিও বলেন, আগামী ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে ইউএস নেভির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘RoboBoat 2026’ প্রতিযোগিতা। প্রথমবারের মতো আমরা বাংলাদেশ থেকে সেখানে অংশ নিতে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশকে গৌরবময়ভাবে উপস্থাপন করা এবং দেশের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনা।

আরেক সদস্য প্রিয়ন্তি ইসলাম বলেন, “এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত। এটা শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতীক।

ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী বলেন, আমাদের স্কুলের ২০০ জন শিক্ষার্থী এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছে। তাদের আগ্রহ ও শেখার উৎসাহ দেখে আমরা আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি, স্কুল–কলেজ পর্যায় থেকেই যদি রোবোটিকস চর্চা শুরু হয়, তাহলে বাংলাদেশের তরুণরাই একদিন বিশ্বমানের উদ্ভাবক হয়ে উঠবে।

‘টিম বেঙ্গলবোট’-এর ৩৪ সদস্যের এই দলটিতে আছেন উপদেষ্টা, মেন্টর, শিক্ষার্থী এবং চ্যাপেরনরা। মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন কুয়েট ও রুয়েটের শিক্ষকরা। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে অনুষ্ঠিত RoboBoat 2026 প্রতিযোগিতায় এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, করনেলসহ বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের এই তরুণ দলও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

বাংলাদেশের তরুণদের হাতে তৈরি এই রোবট শুধুই প্রযুক্তির উদ্ভাবন নয়, এটি এক স্বপ্ন।
বঙ্গোপসাগরের নীল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার, বিশ্বে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন।

“তরী ১.০” সেই স্বপ্নযাত্রারই প্রথম অধ্যায়, যেখান থেকে শুরু হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নীল অর্থনীতির রোবোটিকস বিপ্লব।

এই সম্পর্কিত আরো