জকিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের নেতা খাজা এনামুল হাসান চিশতীকে (৪৩) রোববার সন্ধ্যায় তার নিজ অফিস থেকে আটক করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ। তাকে দুই মাস পুরোনো একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চিশতীকে হয়রানি করছে এবং এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর জকিগঞ্জ থানার এসআই সজিব দেব রায়ের নেতৃত্বে কানাইঘাট উপজেলার আব্দুল মুতলিবের ছেলে কামরান আহমদকে (২১) জকিগঞ্জ থানাধীন ৯নং মানিকপুর ইউনিয়নের কলাকুটা নামক স্থানে খাসেরা রাস্তা থেকে ৮২ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। পরবর্তীতে এসআই সজিব দেব রায় বাদী হয়ে ২০১৮ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ৩৬(১) এর টেবিল ১০ (ক)/৪১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কানাইঘাটের কামরান আহমদই একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন।
তবে, স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এনামুল হাসান চিশতী জকিগঞ্জ যুবদলের একজন নিবেদিত কর্মী। তাকে অন্যায়ভাবে আটক করে দুই মাস আগের একটি পুরনো মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারা দাবি করেন, চিশতী বিগত জুলাই-আগস্ট মাসের আন্দোলনে শহরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তিনি এই ষড়যন্ত্রের শিকার। পুলিশের এমন আচরণকে তারা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দৃশ্যমান আচরণের সঙ্গে তুলনা করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় এনাম চিশতীকে তার বাড়ির পাশের নিজ অফিস থেকে আটক করার সময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে পুলিশ জানায় যে তার বিরুদ্ধে চেকের মামলা রয়েছে। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ নেতাকর্মীরা থানায় উপস্থিত হয়ে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ তখন জানায় যে তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানান, থানা পুলিশ তখন তাদের আশ্বস্ত করে যে এনামুল চিশতীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পরদিন সকাল ৯টার দিকে তাকে দুই মাস আগের মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এনামুল চিশতী যে রাজনীতি করেন তা সবার জানা, কিন্তু পুলিশের এই টালবাহানা প্রমাণ করে যে তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। যদি তিনি মামলার আসামি হতেন, তাহলে তো তিনি পলাতক থাকতেন। এছাড়া, পুলিশ আসার পরও তার পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। তারা মনে করেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশের এমন আচরণ ফ্যাসিবাদী আমলকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তারা সিলেট পুলিশ সুপারসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানিয়েছেন যেন এভাবে ফ্যাসিবাদী কায়দায় মানুষকে হয়রানি না করা হয় এবং কতিপয় কিছু পুলিশ সদস্যের জন্য পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা যেন নষ্ট না হয়।
জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিক আহমদ বলেন, আটকের ঘটনা শুনে আমি থানায় যাই। থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা দেখাতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেন, থানা পুলিশ তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আটক করেছে এবং এনাম চিশতী আটকের ঘটনায় জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুক আহমদ বলেন, এনাম চিশতীকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ তার কাছ থেকে কোনো অবৈধ মালামাল পায়নি। দুই মাস আগের একটি মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে, এটি অবশ্যই নিন্দনীয়।
জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এনাম চিশতী ভাই শহরকেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিগত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে আমরা জেল-জুলুমের শিকার, বর্তমান পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ফ্যাসিবাদী আমলকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এনাম ভাই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক লেইস আহমদ বলেন, এনাম যুবদলের সক্রিয় নেতা। পুলিশের কাছে তার কাছ থেকে কিছু না পাওয়ায় দুই মাস আগের একটি পেন্ডিং মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
জকিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুজন আহমদ জানান, যুবদল নেতা এনাম চিশতীকে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তিনি জানেন না, যিনি ধরেছেন তিনিই জানেন।
জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মফিজুর রহমান বলেন, তার অফিস থেকে তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এনাম চিশতীকে নিয়ে তো নিউজ হয়েছে এবং তাকে মাদক সংশ্লিষ্টতায় আটক করা হয়েছে। প্রতিবেদক কোন মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি অভিযানে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
তার বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির সভাপতির অভিযোগ উত্তেজিত হয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেন, যদি তিনি বলে থাকেন আমার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাহলে তিনিও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তবে মামলা সংক্রান্ত কোনো সদুত্তর দেননি জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মফিজুর রহমান।