সুনামগঞ্জের ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতী বাজারে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে আহত হয়ে অবশেষে মারা গেছেন বনগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ মানিক মিয়া (৪৭)। তিনি সোমবার (২ নভেম্বর) ভোরে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত মানিক মিয়ার পিতা জগম্বর আলী, গ্রাম বনগাঁও, উপজেলা ছাতক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ইছামতী বাজারে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে লুবিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ডেবিল কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ী মানিক মিয়ার ওপর হামলা চালায়। এসময় তার মাথা ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন।
হামলার কিছুক্ষণ পর বনগাঁও ও লুবিয়া গ্রামের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ইছামতী বাজারের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, এতে বাজারে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হয়েছেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় মানিক মিয়াকে প্রথমে সিলেট নিয়ে যাওয়া হয়, পরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহতের ব্যবসা ও শ্বশুরবাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় হওয়ায় ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ—দুই উপজেলাতেই শোকের ছায়া নেমে আসে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহত মানিক মিয়ার স্ত্রী সাহিমা বেগম বাদী হয়ে ছাতক থানায় ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন; এ ছাড়াও ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, লুটপাটের ঘটনায় দারগাখলী গ্রামের রুস্তম আলী বাদী হয়ে ৬৮ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে আরও এক থেকে দেড়শ লুটপাটকারীকে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “সংঘর্ষে জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। নিহত মানিক মিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বনগাঁও গ্রামের বাড়িতে আনা হচ্ছে। মঙ্গলবার বাদ জোহর বনগাঁও আলীম মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে, জানিয়েছেন নিহতের ছোটভাই (শ্যালক) মোহাম্মদ রায়হান।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিক আলী মেম্বার বলেন, “এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ টহল চলছে, পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। তবে এলাকাবাসীর দাবি—মূল অভিযুক্ত ডেবিল কামরুজ্জামান, আমির হোসেন ও মনিরুজ্জামানকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”