সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
শাল্লায় নৌ-পুলিশের মাদক আটককান্ডে ১৫০ লিটার মদসহ তিন মোটরসাইকেল উদাও! আবেদন না করেই ও পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি চাকরি সালমান শাহ হত্যা মামলায় সামিরা ও ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা কুলাউড়ায় রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান ৩ যাত্রীকে জরিমানা শেষ মুহূর্তে বিএনপি'র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ - দিরাই-শাল্লা আসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা কুলাউড়ায় বিজিবি ক্যাম্পের পাশ থেকেই মূল্যবান সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ কুলাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ৪ জাপানে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি জানা গেল ‘নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে বিভিন্ন পরাশক্তি ও এজেন্সি সক্রিয় হবে’ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ নেই: আমির খসরু
advertisement
সিলেট বিভাগ

দিরাইয়ের রাজনীতিতে ত্যাগ ও আদর্শের প্রতীক আব্দুস শহীদ চৌধুরী

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁদের আদর্শ ও ত্যাগ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও দিরাই উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শহীদ চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে দিরাইবাসী স্মরণ করছে এক নিরহংকারী, ত্যাগী ও সৎ রাজনীতিককে যিনি রাজনীতিকে দেখেছিলেন সেবার মাধ্যম হিসেবে, ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে নয়।

১৯৪৮ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল গ্রামে এক শিক্ষিত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন আব্দুস শহীদ চৌধুরী। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, পরিশ্রমী ও নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ। দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে তিনি ভর্তি হন সুনামগঞ্জ কলেজে। সেখানেই তাঁর রাজনৈতিক যাত্রার সূচনা হয়।

কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি ছাত্রদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসেন। তাঁর নেতৃত্বগুণ ও বক্তৃতা দক্ষতা তাঁকে অল্প সময়েই জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সুনামগঞ্জ মহকুমা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৬৯-৭০ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) নির্বাচিত হন। এই পদে থেকে তিনি ছাত্রদের ন্যায্য দাবি ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। তখন থেকেই তাঁর নেতৃত্বের বিস্তার ঘটে গোটা সুনামগঞ্জ জেলায়।

১৯৭১ সালে দেশব্যাপী যখন স্বাধীনতার আন্দোলন তীব্রতর হয়, তখন আব্দুস শহীদ চৌধুরী ছাত্রনেতা হিসেবে মুক্তিকামী জনতাকে সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। দিরাই-শাল্লা অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা, তথ্য সরবরাহ ও জনমত গঠনে তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের কারণে স্থানীয় তরুণদের মাঝে ব্যাপক প্রভাব তৈরি হয়।

স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনের সময় তিনি চীন, ইরাক, ইরান ও জার্মানি সফর করেন। সফরকালে দেশের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রচারে যুক্ত ছিলেন।

১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনের উদ্যোগ নেন, তখন আব্দুস শহীদ চৌধুরী সক্রিয়ভাবে এতে যুক্ত হন। তিনি ছিলেন দিরাই উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে তিনবার উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ সময় সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও তিনি একাধিকবার সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর নেতৃত্বে দিরাই-শাল্লা অঞ্চলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ভিত্তি পায়। তিনি সব সময় কর্মীদের পাশে ছিলেন সঙ্কটের মুহূর্তে সাহস জুগিয়েছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।

দলের প্রবীণ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আব্দুস শহীদ চৌধুরী ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি দলকে ভালোবেসেছেন নিজের চেয়ে বেশি। তাঁর নবম মৃত্যু বার্ষিকীতে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাঁর মাগফেরাত কামনা করি। শুধু রাজনীতি নয়, সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন অগ্রণী। দিরাইয়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও সহজ-সরল। তাঁর বাড়ি ছিল সর্বদা সাধারণ মানুষের জন্য খোলা যে কোনো প্রয়োজনে মানুষ তাঁর কাছে ছুটে যেত, আর তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন নিঃস্বার্থভাবে।

স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মতে, তাঁর রাজনীতি ছিল ত্যাগ ও আদর্শের রাজনীতি। ক্ষমতার লড়াইয়ের চেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। দিরাইয়ের জনপদে তিনি জনমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। তিনি ছিলেন রাজনীতিতে ত্যাগ ও আদর্শের প্রতীক।

দীর্ঘ কর্মব্যস্ত জীবনের শেষ সময়ে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই ত্যাগী নেতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও তিন কন্যা সন্তান রেখে যান। তাঁর দাফন সম্পন্ন হয় নিজ জন্মভূমি দিরাইয়ের তাড়ল গ্রামে। তাঁর মৃত্যুতে দিরাই ও শাল্লা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অনেক নেতাও সেদিন এই ত্যাগী নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেন, তাঁর অসমাপ্ত কাজ ও রাজনৈতিক আদর্শের ধারা অব্যাহত রয়েছে তাঁর সুযোগ্য সন্তান এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল-এর মধ্যে। সুনামগঞ্জ–২ (দিরাই–শাল্লা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেতা পিতার পথ অনুসরণ করে মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।

স্থানীয় রাজনীতিকরা বলেন, আব্দুস শহীদ চৌধুরী ছিলেন ত্যাগের প্রতীক, আর তাঁর সন্তান এডভোকেট পাবেল সেই আদর্শকে আজকের প্রজন্মে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে দিরাইয়ের মানুষ তাঁকে স্মরণ করছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। এ উপলক্ষ্যে দিরাইয়ে রোববার (২৬ অক্টোবর) স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলেন, আব্দুস শহীদ চৌধুরী ছিলেন দিরাইয়ের রাজনীতির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। তাঁর আদর্শ ছিল, রাজনীতি মানে মানুষের সেবা, জনগণের পাশে থাকা। তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষা আজও তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক রাজনীতির পথে অনুপ্রাণিত করে। আব্দুস শহীদ চৌধুরী ছিলেন এমন এক নেতা, যিনি নিজের সততা, ত্যাগ ও নিষ্ঠা দিয়ে রাজনীতিকে মানবিক রূপ দিয়েছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় দিরাইয়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক মূল্যবান অংশ। মৃত্যুর বহু বছর পরও তাঁর নাম উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধার সঙ্গে, কারণ তিনি ছিলেন শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন-ছিলেন এক আদর্শবান মানুষ, যিনি রাজনীতিতে সত্যিকার অর্থে জনসেবার প্রতীক হয়ে আছেন।

এই সম্পর্কিত আরো

শাল্লায় নৌ-পুলিশের মাদক আটককান্ডে ১৫০ লিটার মদসহ তিন মোটরসাইকেল উদাও!

আবেদন না করেই ও পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি চাকরি

সালমান শাহ হত্যা মামলায় সামিরা ও ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

কুলাউড়ায় রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান ৩ যাত্রীকে জরিমানা

শেষ মুহূর্তে বিএনপি'র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ দিরাই-শাল্লা আসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা

কুলাউড়ায় বিজিবি ক্যাম্পের পাশ থেকেই মূল্যবান সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ

কুলাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ৪

জাপানে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি জানা গেল

‘নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে বিভিন্ন পরাশক্তি ও এজেন্সি সক্রিয় হবে’

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ নেই: আমির খসরু