শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

‘মিনিস্টার বাড়ি’ রক্ষায় একদিকে মানবন্ধন, অন্যদিকে চলছে ভাঙা

সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘মিনিস্টার বাড়ি’ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি করছে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট। ঐতিহ্যবাহী বাড়ির বেদখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারে সংশ্লষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে বাড়িটির ফটকে মানববন্ধন করে সংগঠনটি। এ কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে স্থপতিদের সংগঠন ‘ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক বাংলাদেশ’ (আইএবি) ও সেভ দ্য হেরিটেজসহ বিভিন্ন ব্যক্তি। মানববন্ধন চলাকালেও বাড়িটি ভাঙার কাজ চলছিল। 

এর আগে শুক্রবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটি পরিদর্শন করে রবিবার পর্যন্ত ভাঙার কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিল। এ নির্দেশনায় ওইদিন ভাঙার কাজ বন্ধ রাখা হলেও গতকাল শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির মূল ফটকে তালা মেরে ভাঙার কাজ চলছে। 

‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ’ সিলেটের ট্রাস্টি রেজাউল কিবরিয়ার সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে মানববন্ধন শুরু হয়। সেভ দ্য হেরটিজের পক্ষে উজ্জ্বল মেহেদীর সঞ্চালনায় সংরক্ষণ দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুত্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, লেখক-সংগঠক সৈয়দ মনির হেলাল, ‘ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক বাংলাদেশ’ (আইএবি) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি রাজন দাশ, আব্দুল কাদের তাপাদার, মুহিত চৌধুরী।

বক্তারা বলেন, সিলেট যেমন প্রকৃতিকভাবে সম্পদ সমৃদ্ধ, ঠিক তেমনই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক দিয়েও সমৃদ্ধ। অতীত ইতিহাস সুরক্ষিত থাকে স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষেণের মধ্য দিয়ে। এ অবস্থায় মিনিস্টার বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হলে ইতিহাসের একটি প্রমাণ হারিয়ে যাবে। বক্তারা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে কেবল নির্দেশনা দিয়ে নয়, নিদর্শন হিসেবে ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সংরক্ষণের আহবান জানান। পাশাপাশি আবদুল হামিদ মিনিস্টারের বেহাত হওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারের দাবি জানান তারা।

জায়গা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ‘ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক বাংলাদেশ’ (আইএবি) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক স্থপতি রাজন দাশ বলেন, এর বাড়িটি জাতীয় স্মৃতি নিদর্শন। যা সংরক্ষণে কেবল প্রত্নতত্ত্ব আইন নয়, আমাদের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। বাড়ির সীমানাপ্রাচীর সিলেট সিটি করপোরেশন রাস্তা বর্ধিত করতে ভেঙেছিল। সেটি পুনঃস্থাপন করা হয়নি। এছাড়া, সড়ক ও জনপথ বিভাগও বেশ কিছু জায়গা বিনা অধিগ্রহণে ব্যবহার করছে। এসব জায়গা পুনুরুদ্ধার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভূমিকা নিতে হবে।

ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভির হাসান, সুব্রত দাশ, উন্নয়নকর্মী মেহাম্মদ আজিজুর রহমান, রাজনীতিবিদ রেজাউল করিম আলো, যুব ইউনিয়ন নেতা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ আব্দুল জব্বার শাহী, অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মুহিত চৌধুরী, ‘ভয়েস টোয়েন্টিফোর’-এর কনটেন্ট ক্রিয়েটর আবদুর রহমান হীরা, স্থপতি কল্লোল চন্দ শান্ত, স্থপতি রেজওয়ান আহমেদ সামি, স্থপতি মারিয়াম চৌধুরী, স্থপতি রাবেয়া বসরি রিফাত, স্থপতি শাহ মো. হাছিন শাদ, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্যের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, শেওতি আলম।

মানববন্ধন চলাকালে দেখা গেছে, মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভাঙার কাজ চলছে। এ বিষয়ে জানতে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা বাড়ির মালিক পক্ষের প্রতিনিধি আনিসুল ইসলামকে ফটক থেকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাননি।

ঐতিহ্যবাহী ‘মিনিস্টার বাড়ি’ চুন-সুরকির ছাদওয়ালা ‘লেট-ব্রিটিশ’ স্থাপত্যশৈলীর। বাড়িটির মালিক ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের আসামের মন্ত্রীখ্যাত রাজনীতিক আবদুল হামিদ। প্রায় ৯৫ বছর টিকে থাকা এই আসামস্মৃতির নিদর্শনটি এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। 

স্থানীয় ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে, বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ। তিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। সেই সূত্রেই বাড়িটি ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিতি পায়। এই বাড়িতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তৎকালীন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব- মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেকে। আবুল মাল আবদুল মুহিত তার আত্মজীবনীতে এই বাড়ির উল্লেখ করেছেন। মিনিস্টার আবদুল হামিদ তার দাদা ছিলেন।

গত শুক্রবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিদর্শনে গবেষণা সহকারী মোহাম্মদ ওমর ফারুক সরেজমিন গিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনার পরদিন শনিবার থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়। ভাঙার কাজের দায়িত্বে থাকা ভাঙারি ব্যবসায়ী মহরম আলী জানান, তিনি বাড়িটি ভাঙার জন্য ভাঙারির দরে ১৮ লাখ টাকায় কিনেছেন।

এই সম্পর্কিত আরো