এক মাসে ১৫টি অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ, আটক ১৮ জন — সীমান্তে নজরদারি জোরদার, হবিগঞ্জে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে পুলিশ সুপারের কঠোর অবস্থান
হবিগঞ্জ জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে ‘মাদককে না বলুন’ নীতিকে সামনে রেখে জেলায় পরিচালিত হচ্ছে ধারাবাহিক অভিযান। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন— মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।
গত এক মাসে হবিগঞ্জ জেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে বড় বড় মাদকচক্রের সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে। এসময় মোট ১৫টি অভিযানে ১শ ২৭ কেজি গাঁজা, ৮শ কেজি ভারতীয় ফুচকা, ৩০৮ পিস ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ কসমেটিকস ও জাল টাকা জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে।
হবিগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলায় গঠিত বিশেষ টিম প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছে। বিশেষ নজরদারি রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে, যেখান দিয়ে আন্তজেলা মাদক চক্র ছদ্মবেশে পাচার কার্যক্রম চালাতো। পুলিশের শক্তিশালী সোর্স নেটওয়ার্ক ও নিয়মিত টহলের ফলে এসব চক্র এখন বিকল্প পথে মাদক পাচারের চেষ্টা করছে, তবে তারাও পুলিশের নজরদারির বাইরে নয়।
সাম্প্রতিক অভিযানের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত:
২৩ অক্টোবর সকালে চুনারুঘাট পৌরসভার বান্নিপার্ক রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ৬ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে থানা পুলিশ।
একইদিন সকাল ১০টায় চুনারুঘাট চণ্ডি মাজার গেইট থেকে ১৫ কেজি গাঁজাসহ আরও দুইজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
১৫ অক্টোবর সদর থানার পাইকপাড়া বাইপাস এলাকা থেকে ৩০৮ পিস ইয়াবাসহ একজনকে আটক করা হয়।
১৪ অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জে ৭০ কেজি গাঁজা জব্দ হয়।
১৩ অক্টোবর ডিবি পুলিশের অভিযানে ওলিপুর রেলক্রসিং এলাকা থেকে ৮শ কেজি ভারতীয় ফুচকাসহ তিনজন চোরাকারবারি আটক করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন অভিযানে বাহুবল, মাধবপুর ও সদর উপজেলায় গাঁজা, ইস্কোপ সিরাপ, ফেইস ওয়াশ, জাল নোটসহ বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমান বলেন, “আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। হবিগঞ্জের যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষায় পুলিশ দিনরাত কাজ করছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে যাতে ভারতীয় মাদক প্রবেশ করতে না পারে। মাদকবিরোধী যোদ্ধা হিসেবে আমাদের অভিযান চলবে যতদিন প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, মাদকবিরোধী সফল অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, যাতে অন্যরাও উৎসাহিত হয়।
বর্তমানে হবিগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে, সচেতন নাগরিক, সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতারা পুলিশ সুপার এ.এন.এম সাজেদুর রহমানের এই কঠোর অবস্থানকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাঁকে ‘মাদক ব্যবসায়ীদের যমদূত’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন অনেকে।
হবিগঞ্জ জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপার সাজেদুর রহমানের কঠোর উদ্যোগ ও তৎপরতায় মাদকচক্রের নড়বড়ে ভিত্তি ভেঙে পড়েছে। জনগণের প্রত্যাশা— এই অভিযান চলমান থাকলে হবিগঞ্জ অচিরেই মাদকমুক্ত জেলায় পরিণত হবে।