সিলেটের জৈন্তাপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ছোড়া গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বিজিবির পক্ষ থেকে নিহত আলমাস উদ্দিন চোরাকারবারি দাবী করা হলেও স্থানিয়রা বলছে সে একজন কৃষক।
নিহত যুবক উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে আলমাছ উদ্দিন (২৩)।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে চারিকাটা ইউনিয়নের বালিধারা কান্দির মুখ মসজিদের দক্ষিণ পাশে তাজ উদ্দিনের বাড়ির সন্নিকটে চতুল-লালাখাল রাস্তার উপর এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এসময় চোরাইপণ্য ভর্তি পিকআপ জব্দ করা হয়।
স্থানিয় এলাকাবাসী জানায়, জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি)র অধীনস্থ সুইরঘাট বিওপির চারজন বিজিবি সদস্য ২টি মোটরসাইকেল যোগে ভারতীয় চোরাই সুপারি বহনকারী একটি পিকআপকে ধাওয়া করে। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে পথচারি কৃষক আলমাস উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা বেলা ১১ টায় আলমাছ উদ্দিনকে দ্রুত জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক থাকে মৃত ঘোষনা করে। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে উপস্থিত হয়। দুপুর ৩ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমার উপস্থিতিতে নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করা হয়।
বিজিবির গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহতের পরিবার সহ এলাকাবাসি দাবী করছেন নিহত আলমাস উদ্দিন রামাই (বরবটি) বাগানের কৃষক। সে চোরাকারবারে জড়িত না। এ ঘটনায় নিহতের সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বিজিবি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনার দিন সকাল ১০টায় জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি) এর অধীনস্থ সুরাইঘাট বিওপির একটি টহলদল জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের ভিত্রিখেল সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান বিরোধী অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালীন টহলদল একটি অবৈধ পণ্যবাহী পিকআপ আটক করলে, অজ্ঞাতনামা একদল সশস্ত্র চোরাকারবারী দেশীয় ধারালো অস্ত্র, দা, বল্লম, লাঠি-সোটাসহ টহলদলের উপর আকস্মিকভাবে হামলা চালায় এবং আটককৃত মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চোরাকারবারীদের ক্রমাগত আক্রমণ থেকে সরকারি সম্পদ (অস্ত্র ও গোলাবারুদ) ও টহলদলের সদস্যদের জান-মাল রক্ষার্থে, বিজিবি সদস্যগণ নিরুপায় হয়ে ০৪-০৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানানো হয়েছে।
এ সময় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, একজন বিজিবি সদস্য আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে আলমাস উদ্দিনের নিহতের ঘটনা উল্লেখ করা হয় নি।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের মাথার পিছনে গুলির আঘাত পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এব্যাপারে থানায় কোন মামলা হয় নি।
১৯ বিজিবির কমান্ডার লেফটনেন্ট কর্ণেল জুবায়ের আহমদ জানান, গুলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত ব্যক্তি চোরাকারবারি উল্লেখ করে তিনি বলেন, চোরাই পণ্যবাহী ট্রাকের সাথেই তিনি ছিলেন।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, নিহতের দেহে তিনটি বুলেট আঘাতের চিহ্ন সনাক্ত করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ পুলিশের হেফাজতে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।