শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

সিলেটে চব্বিশ ঘণ্টায় কারাগারে ১৬

সবুজে-শ্যামলে ঘেরা চা-বাগান। পাহাড়ি ছায়া আর ঐতিহ্যের শহর সিলেট। যেখানে দিনের আলোয় ধরা দেয় এক শান্ত, নিস্তরঙ্গ নগরীর ছবি। কিন্তু সূর্য ডুবার পর যেন অন্য এক সিলেট চোখে পড়ে। নিঃশব্দে, ছায়ার মতো নেমে আসে অপরাধের ছায়া।  যেখানে কাভার্ডভ্যানের পেটে চা-পাতা, বাসের আসনের নিচে ভারতীয় কম্বল, অলিগলিতে লুকিয়ে থাকা মাদক, আর চায়ের দোকানের আড়ালে চলা জুয়ার আসর।

সম্প্রতি ২৪ ঘন্টার অভিযানে সেই অন্ধকার জগতের পর্দা টেনে ধরেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। চা-বাগান থেকে গ্যারেজ, সীমান্তঘেঁষা পথ থেকে শহরের ব্যস্ত মোড়। সবখানেই অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ১৬ জন। কারো কাছে ইয়াবা, কারো কাছে গাঁজা, আবার কারো কাছে পাওয়া গেছে চোরাই চা ও ভারতীয় পণ্য। আর কেউ বা জড়িয়ে পড়েছিল জুয়ার মত ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধিতে।

এই অভিযান প্রমাণ করে, দিনের আলোয় স্নিগ্ধ যে শহর, রাতের আঁধারে সে শহরই হয়ে ওঠে অপরাধের এক চলমান ছায়াছবি। পুলিশি অভিযানে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র ও গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সেই ছবিরই কিছু চরিত্র মাত্র। তাদের হাত ধরে বেরিয়ে আসছে এক বিপজ্জনক নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত, যা এখনই রোধ না করা গেলে ভবিষ্যতের সিলেট হয়ে উঠতে পারে আরও ভয়াবহ।

সোমবার (২০ অক্টোবর) ও মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।

জানা যায়, সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এয়ারপোর্ট থানাধীন বড়শলা বাইপাস পয়েন্ট সংলগ্ন ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের গেইটের সামনে চেকপোস্ট চলাকালে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় কোম্পানীগঞ্জ থেকে সিলেটগামী হিমাদ্রী গেইট লক সার্ভিস বাস তল্লাশি করে পুলিশ দুই যাত্রীকে আটক করে তাদের হেফাজত থেকে ২০টি ভারতীয় কম্বল জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গোয়াইনঘাটের মোনাটিলা গ্রামের গোলাম রহমানের ছেলে মো. ইয়াছিন (৩৬) এবং নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের আঙ্গারজুর গ্রামের তাজু উদ্দিনের ছেলে ইমাম উদ্দিন (১৮)।

একইদিন রাতে সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন তুরুখখোলা এলাকায়  ২৪ পিস ইয়াবা বড়িসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- মোগলাবাজার থানার হরগৌরি গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে সুমন আহমদ (৩৫) এবং বাটিয়ারচর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রুমন আহমদ (২০)।

সোমবার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ২টার দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের সাতবাঁক হাফিজিয়া মাদরাসার সামনে সিলেটের কানাইঘাট থানাপুলিশ অভিযান চালিয়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান থেকে ৮০ বস্তা ভারতীয় চা-পাতা (প্রায় ৪ হাজার কেজি) আটক করেছে। উদ্ধারকৃত চা-পাতার বাজারমূল্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। এসময় কাভার্ডভ্যান চালক মাসুম মিয়া (২৬)-কে আটক করা হয়। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার হাওরাবাজার গ্রামের মৃত নাইম উদ্দিনের ছেলে। পুলিশ জানায়, ঘটনাটি তদন্ত করে চোরাচালান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।

একই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ সিলেটের লাক্কাতুড়া চা বাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, লাক্কাতুড়া চা বাগানের মিলন লোহার ছেলে মিশু লোহার (২৪) ও ব্রজ লোহার ছেলে অক্ষয় লোহার (১৯) এবং কোম্পানীগঞ্জের গৌরীনগর গ্রামের সুরকম আলীর ছেলে ফয়জুল হক (২৬)। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার থানার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের লামা হাজরাই রেলব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে হুশিয়ার আলী (৫০) ও কবির মিয়া (৪৮) নামের দু’জন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। হুশিয়ার আলী লামাহাজরাই গ্রামের ইন্তাজ আলীর ছেলে ও কবির মিয়া একই গ্রামের মৃত আব্দুল খালিক ওরফে শম্ভুর ছেলে।

অন্যদিকে সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানাধীন তেমুখী এলাকা থেকে সুলতান (২৮) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তার হেফাজত থাকা ২৩ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। সুলতান শিবেরবাজার এলাকার সতর দক্ষিণপাড়া গ্রামের শুকুর উল্লাহর ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা (নং ৯/১০/২৫) দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকাল ৪টার দিকে সিলেট মহানগরীর রিকাবীবাজার এলাকার বশির মিয়ার রিকশা গ্যারেজ থেকে জুয়া খেলার সরঞ্জামসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী মডেল থানাপুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বিয়ানীবাজারের উজানডাকি গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে ফারুক হোসেন (৫৯), হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পুরানগাঁও গ্রামের মো. মতিউর রহমানের ছেলে ফয়সল আহমদ (২১), কোতোয়ালী থানার চিটাগাঙ কলোনির ফকির মিয়া ওরফে সেলিমের ছেলে জিসান (১৯) ও ঘাসিটুলা লামাপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে মো. সাগর (২৮)।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের সবার বিরুদ্ধে থানায় সংশ্লিষ্ট অভিযোগ উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) সব সময়ই অপরাধ নির্মূল ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। সাম্প্রতিক ২৪ ঘণ্টার এই সমন্বিত অভিযান ছিল আমাদের চলমান কার্যক্রমেরই অংশ। যার লক্ষ্য সিলেট নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা। আমরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মাদক, চোরাচালান, জুয়া ও অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে মোট ১৬ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের অবৈধ দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় চা-পাতা, ইয়াবা, গাঁজা, ভারতীয় কম্বল এবং জুয়ার সরঞ্জাম। প্রতিটি অভিযানে আমরা প্রমাণ পেয়েছি, কিছু অসাধু ব্যক্তি সিলেটের শান্ত পরিবেশকে ব্যবহার করে গড়ে তুলছে একটি অপরাধের নেটওয়ার্ক। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই শহরে অপরাধীদের কোনো জায়গা নেই।’

এই সম্পর্কিত আরো