ইতালির উদ্দেশ্যে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার অন্তত ছয় তরুণ ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এই ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারে গভীর উৎকণ্ঠা, আহাজারি ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার যাত্রাপাশা ও মজলিশপুর গ্রামের ছয় তরুণ লিবিয়া থেকে নৌপথে ইতালিতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন। দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রায় ১৭ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে তারা এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় অংশ নেন। কিন্তু সপ্তাহের পর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না।
নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন যাত্রাপাশা ও মজলিশপুর গ্রামের আলফাজ মিয়া রনি, মিজান আহমেদ, সিয়াম জমাদার, মুজাক্কির মিয়া, সায়েম খান (২২) এবং প্রথম রেখ গ্রামের রাজু আহমেদ। এছাড়া তারাসই গ্রামের আরও কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেলেও, তাদের নাম এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জানান, লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর থেকেই তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এক পর্যায়ে তারা ফোনে জানায় সমুদ্রপথে রওনা দিয়েছে, এরপর থেকেই সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
যাত্রাপাশা গ্রামের নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলেটার মুখটা একবার দেখতে চাই। বাঁচে থাকুক বা না থাকুক, অন্তত তার খোঁজটা যেন পাই।’
মুজাক্কির মিয়ার বড় ভাই বলেন, ‘ওদের স্বপ্ন ছিল ইতালিতে গিয়ে সংসারের হাল ধরবে। এখন আমরা শুধু খবরের আশায় বসে আছি, কিন্তু কেউ কোনো উত্তর দিতে পারছে না।’ প্রথম রেখ গ্রামের রাজু আহমেদের বাবা হতাশা ব্যক্ত করে জানান, ‘দালালের কথায় ছেলেটা জীবনটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এখন ফোন বন্ধ, কেউ কিছু বলতে পারছে না।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দালাল চক্র গোপনে তরুণদের লিবিয়া হয়ে ইতালিতে পাঠাচ্ছে। তারা অসহায় পরিবারের স্বপ্নকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে এই বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, নিখোঁজদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিবিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিখোঁজদের দ্রুত খুঁজে বের করতে আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে যোগাযোগ চলছে এবং পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত তথ্য ভাগাভাগি করা হচ্ছে।’