মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
খেলাধুলা

জাতীয় দলে সুযোগের নেপথ্যে কী আছে, কী নেই?

বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্কোয়াড নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্ক বা প্রশ্নের অভাব কখনোই ছিল না। তবু সময়ের সঙ্গে যেন সেই ধাঁধা আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। কেন বারবার সুযোগ পাচ্ছেন লিটন দাস, নাঈম শেখ কিংবা এনামুল হক বিজয়? কেনই বা দলে জায়গা হয় না নুরুল হাসান সোহান কিংবা মোসাদ্দেক হোসেনের?—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যেন এখন এক দুরূহ সাধনা।

সম্প্রতি ঘোষিত শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে স্কোয়াডে আবারও এই বিভ্রান্তির প্রতিফলন।

লিটনের প্রত্যাবর্তন, কিন্তু কোন ইনিংসে ভর করে?

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া লিটন দাস আবারও জায়গা করে নিয়েছেন ওয়ানডে দলে, অথচ এই ফরম্যাটে তিনি শেষ ম্যাচ খেলেছেন বেশ আগেই। তার পারফরম্যান্সেও নেই কোনো স্মরণীয় ইনিংস। তাহলে কোন যুক্তিতে ফেরানো হলো তাকে? নির্বাচকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, টি-টোয়েন্টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় লিটনকে রাখা হচ্ছে, তাই ওয়ানডেতেও তার থাকা জরুরি!

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে কীভাবে ওয়ানডে দলে ঢোকা যায়? যদি এমনই হয়, তাহলে সৌম্য সরকারকে বাদ দেওয়া কতটা ন্যায্য? ডিপিএলে রান, গড় এবং স্ট্রাইকরেট—সবদিক থেকেই তো লিটনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন সৌম্য। বয়সের বিচারে খুব একটা ব্যবধানও নেই—লিটন ৩০, সৌম্য ৩২। তবে কি লিটনকে ‘তরুণ’ ভাবছে বিসিবি?

সোহান—প্রশ্নের মুখে এক নির্ভরতার নাম

উইকেটরক্ষক হিসেবে লিটনের সুযোগ পাওয়া নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। যদি সেটিই হয়, তবে নুরুল হাসান সোহান কী দোষ করলেন? ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, দায়িত্বশীল ব্যাটিং, নেতৃত্বগুণ—সবই আছে তার। বরং, বরাবরই তাকে মনে করা হয় একজন পরিণত ক্রিকেটার।

সিনিয়র কোচ সালাউদ্দিন একসময় বলেছিলেন, ‘অনেক সময় গায়ের রঙ কালো বলেই হয়তো কেউ সুযোগ পায় না।’ সোহানের ক্ষেত্রে সেটাও খাটে না। ব্যক্তিত্ব, আচরণ কিংবা পারফরম্যান্স—সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন ইতিবাচক। তাহলে কেন তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে? পাকিস্তানি ক্রিকেটার আহমেদ শেহজাদ একবার বলেছিলেন, ‘বেশি হ্যান্ডসাম বলেই নাকি তাকে বাদ দেওয়া হতো।’ সোহানের ক্ষেত্রেও কি তবে এমনই কোনো অদৃশ্য ব্যাখ্যা?

বিপিএল, ডিপিএল—কোন ফরম্যাটে ভালো করলে মিলবে সুযোগ?

ডিপিএলে ভালো করেই আবার দলে ফিরেছেন নাঈম শেখ। অ্যাপ্রোচ ও ধারাবাহিকতা তাকে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে বিবেচনায় এনেছে নির্বাচকদের। কিন্তু একই টুর্নামেন্টে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়া এনামুল হক বিজয় নেই দলেই।

বিপিএলে ব্যাট-বলে অলরাউন্ড পারফর্ম করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কিন্তু সেই পারফরম্যান্সেও জাতীয় দলের দরজা খুলছে না তার জন্য। অনেকে তো বলছেন, লাল বলে ব্যর্থ হলেই বাদ, সাদা বলে ভালো করলেও উপেক্ষিত। তাহলে খেলোয়াড়রা বুঝবেন কখন, কোন ফরম্যাটে ভালো করলে তারা নির্বাচকদের নজরে আসবেন?

বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্কোয়াড ঘোষণা এখন যেন অনেকটাই অনুমাননির্ভর এক জটিল পাজল। যেখানে অনেক সময়ই পারফরম্যান্স নয়, গুরুত্ব পায় অন্য কিছু। একেকজনের জন্য একেক মানদণ্ড, একেক পছন্দ-অপছন্দ।

নির্বাচনের এই ‘হ-য-ব-র-ল’ চিত্র ভক্ত-সমর্থকদের মনে যেমন প্রশ্ন তোলে, তেমনি দলের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনাতেও ছড়ায় অনিশ্চয়তা।

প্রশ্নগুলো জমতেই থাকে—উত্তর আসে, তবে স্পষ্টতা নয়, বরং জটিলতাই যেন আরও বাড়িয়ে দেয়!

এই সম্পর্কিত আরো