হামজা চৌধুরী কি কখনো গোলকিপিং করেছেন? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন, গতকাল নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখলে হয়তো বুঝতে পারবেন। ঘড়ির কাটায় ৯০ মিনিটের খেলায় খেলেছেন ৮০ মিনিটের মতো। মাঠের এপাশ থেকে ওপাশ-সর্বত্র নিংড়ে দিয়েছেন নিজেকে।
সাম্প্রতিক সময়ে গোল বাংলাদেশের কাছে সোনার হরিণের মতো। কোনো ম্যাচের আগে অবধারিতভাবে ফুটবলারদের কাছে প্রশ্ন থাকে, গোল করা নিয়ে কীভাবে কাজ করছেন। হামজা ফরোয়ার্ড নন, তবু তাঁর দিকে একই প্রশ্ন না করে উপায় ছিল না। নিজের স্বভাবজাত হাসিতে তখন হামজা বলে দেন, ‘চেষ্টা করব’। সেই চেষ্টার ফসল এতটাই যে, ৬ ম্যাচ খেলে নামের পাশে ৪ গোল যোগ করে ফেলেছেন তিনি। আর গতকাল যা করলেন, রীতিমতো অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় ও অকল্পনীয় কোনো বিশেষণেই তা ফেলা যায় না।
ওভারহেড কিকে গোল-তা-ও একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কাছ থেকে। বাংলাদেশ কেন, ফুটবল দুনিয়াতেই তা বিরল। এমনই এক গোল শোরগোল ফেলে দিয়েছে। আবার সেটাও ঠিক তেমন মুহূর্তে, যেমন পরিস্থিতিতে এমন গোল করার জন্য বাংলাদেশের আছেন এক হামজাই! যাঁর খেলায় মিশে আছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ছোঁয়া।
জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে পিছিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরাতে হামজার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সবাই। বিরতির পর প্রথম মিনিটেই কাটা দিয়ে উঠল গায়ের লোম। জামালের বাড়ানো ভলি পেয়ে কোনো বিকল্প চিন্তা না করে হাওয়ায় ভেসে গেলেন হামজা। দুই পা ছড়িয়ে অসাধারণ এক সামঞ্জস্যে কোনাকুনিভাবে বল ফেললেন জালে।
গ্যালারি থেকে কেউ গর্জে উঠলেন, কেউবা হতবাক হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। ঠিক এর চার মিনিট পর আবারও হামজা জাদুতে মুগ্ধ হতে হয়। পেনাল্টিতে এমন একটি শট নিলেন, যা আপনি ইউরোপিয়ান বা লাতিন ফুটবলে দেখে অভ্যস্ত। পানেনকা শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে বোকা বনে যেতে দেখাও এক অন্য রকম প্রশান্তির। হামজা সেটাই করেছেন।
বাংলাদেশের জার্সিতে তাঁর প্রথম গোলটি এসেছিল হেড থেকে। এরপর হংকংয়ের বিপক্ষে ফ্রি কিক থেকে গোল। ওভারহেড–পানেনকা সবকিছুতেই যেন পটু। রক্ষণের কথা নিশ্চয় আলাদা করে না বললে নয়। আক্রমণ প্রতিহত করা থেকে শুরু করে ওপরে ওঠার কাজটা এই মুহূর্তে তাঁর চেয়ে ভালো আর কেইবা পারে। বাংলাদেশ দলে শুধু গোলকিপিং করাটাই বাকি রেখেছেন তিনি। করতে দিলে হয়তো হতাশ করবেন না। ঠিক যেমন নেপাল কোচ হরি খড়কা বলছিলেন, এটা তো কোচের কৌশল (হামজাকে তুলে নেওয়া)। তবে আমি মনে করি, যদি হামজা খেলত, তাহলে আমাদের দ্বিতীয় গোল পাওয়াটা কঠিন হতো।
নিজের একক নৈপুণ্য দেখানোর পরও ২–২ গোলের ড্রয়ে হামজা আড়াল করতে পারলেন না হতাশা, আবারও হতাশাময় এক সমাপ্তি, যে ম্যাচটিতে আমাদের জেতা উচিত ছিল। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য সব সময়ের মতোই ধন্যবাদ। একতাবদ্ধ থাকতে হবে আমাদের। সবাইকে মিলে তৈরি হতে হবে বড় ম্যাচের জন্য।
সেই বড় ম্যাচটা ১৮ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে। কোচ হাভিয়ের কাবেরাকে কৌশল সাজাতে হবে হামজাকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু নিজের কাজটা ঠিকঠাকমতো কি করতে পারছেন তিনি? নেপালের বিপক্ষে প্রথমার্ধে রাকিব হোসেনকে বাঁয়ে ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে ডানে খেলান তিনি। দুজন কোনোভাবেই একে অপরের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁদের সহজাত পজিশনে ফেরানোর পরই বদলে যেতে শুরু করে বাংলাদেশের আক্রমণভাগের চিত্র।
সাংবাদিকদের জন্য বরাবরই অনুশীলন দরজা বন্ধ রাখেন কাবরেরা। অথচ শেষ মুহূর্তে নেপালকে সমতায় ফেরানো গোল করা অনন্ত তামাং খেলেন বাংলাদেশি ক্লাব ফর্টিস এফসির হয়ে। সেই ফর্টিসের বিপক্ষেই কিছুদিন আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। দিনশেষে কাবরেরা কী পেলেন, তা আর বলে দেওয়ার কিছু নেই। আগামীকাল আসা ভারতীয় দলের বিপক্ষে কী কৌশল সাজাবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।