ওপেনএআই তাদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ চ্যাটজিপিটি-৫ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করেছে—এবং এটি বিশ্বের সকল ব্যবহারকারীর জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি দখলের দৌড়ে এটি এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান জানান, নতুন মডেলটি আরও স্মার্ট, দ্রুত এবং বহুমুখী দক্ষতায় ভরপুর। তার ভাষায়, ‘এটি যেন সত্যিকারের একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার মতো অভিজ্ঞতা দেয়।’
যদিও এটি এখনও মানুষের মতো চিন্তা করতে সক্ষম নয়, অল্টম্যান মনে করেন, এটি সেই লক্ষ্যের দিকে এক বড় ধাপ। বর্তমানে সপ্তাহে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন বলে প্রতিষ্ঠানটি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এটি এমন একটি মডেল নয় যা ব্যবহার চলাকালে নতুন তথ্য থেকে ক্রমাগত শিখে—যা তার মতে, প্রকৃত কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) অর্জনের জন্য জরুরি। তবুও এর সক্ষমতাকে তিনি ‘বিরাট অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাপন ও কাজের ধরন পাল্টে দেবে।
মেটা প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এক অভ্যন্তরীণ বার্তায় লিখেছেন, ‘এআই উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হওয়ায় সুপারইনটেলিজেন্স এখন দিগন্তে দৃশ্যমান। আমি বিশ্বাস করি, এটি মানবজাতির জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হবে।’
অল্টম্যান আরও জানান, এজিআই অর্জনের পথে এখনও ‘অগণিত সম্ভাব্য অগ্রগতি’ বাকি রয়েছে এবং এ জন্য বিপুল পরিমাণ কম্পিউটিং শক্তিতে বিনিয়োগ চালিয়ে যাবে ওপেনএআই।
প্রযুক্তি জায়ান্ট আমাজন, গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট এবং ইলন মাস্কের এক্সএআই—সবাইই ২০২২ সালের শেষ দিকে প্রথম চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা ও উন্নয়নে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। চলতি বছরের শুরুতে চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক সাশ্রয়ী চিপ ব্যবহার করে শক্তিশালী একটি মডেল উন্মোচন করে এআই খাতে চমক সৃষ্টি করে।
‘পিএইচডি-স্তরের বিশেষজ্ঞ’
তীব্র বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মধ্যে অল্টম্যান দাবি করেছেন, কোডিং, লেখালেখি, স্বাস্থ্যসেবা সহ নানা ক্ষেত্রে এখন শীর্ষস্থানে রয়েছে চ্যাটজিপিটি-৫।
তার মতে, ‘জিপিটি-৩ ছিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রের মতো—প্রশ্ন করলে সঠিক উত্তরও পেতেন, আবার কখনও পুরোপুরি ভুল কিছুও আসত। জিপিটি-৪ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মতো। আর জিপিটি-৫-এ প্রথমবার মনে হচ্ছে, যেকোনো বিষয়ে আপনি পিএইচডি-স্তরের একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলছেন।’
অল্টম্যান বিশ্বাস করেন, ‘ভাইব-কোডিং’—অর্থাৎ স্বাভাবিক আলাপচারিতার মাধ্যমে সফটওয়্যার তৈরি—চ্যাটজিপিটি-৫ যুগের অন্যতম সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য হবে।
ব্রিটিশ এআই বিশেষজ্ঞ সাইমন উইলিসন, যিনি মডেলটির প্রাথমিক সংস্করণ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিলেন, ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার রায়: এটি কাজে দারুণ দক্ষ। নাটকীয় কোনো অগ্রগতি মনে হয় না, তবে খুব কমই ভুল করে—এবং প্রায়ই চমকে দেয়।’
তবে ইলন মাস্ক এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দাবি করেছেন, তার নিজস্ব এআই মডেল ‘গ্রক ৪ হেভি’ চ্যাটজিপিটি-৫-এর চেয়ে ‘বেশি বুদ্ধিমান’।
নিরাপদ ও সৎ এআই
ওপেনএআই-এর নিরাপত্তা গবেষণা প্রধান অ্যালেক্স বিউটেল জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটি-৫-কে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে এটি বিশ্বস্ত থাকে এবং কোনো ক্ষতিকর কাজে সহায়তা না করে।
‘আমরা মডেলটির বিভ্রান্তিকর উত্তর দেওয়ার প্রবণতা পরিমাপের জন্য বিশেষ মূল্যায়ন করেছি এবং এটিকে সৎ হতে প্রশিক্ষণ দিয়েছি,’ তিনি বলেন। মডেলটি ‘নিরাপদ উত্তর’ দিতে নকশা করা হয়েছে—যেখানে সংবেদনশীল বা সম্ভাব্য বিপজ্জনক তথ্য এড়িয়ে চলা হয়।
এছাড়া, এই সপ্তাহে ওপেনএআই আরও দুটি নতুন এআই মডেল উন্মুক্ত করেছে, যা বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিজের মতো কাস্টমাইজ করা যাবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে নেওয়া এই উদ্যোগকে অনেকে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতার দিকে অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।