গণহত্যার বিচার ও সংস্কার না হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমীর এবং ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. মো. হেলাল উদ্দিন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর একটি সম্মেলন কেন্দ্রে পল্টন থানা জামায়াতের রোকন সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির আওতায় না আনলে ভবিষ্যতেও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আহত ও শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। তা না হলে জনগণ আগামী নির্বাচন মেনে নেবে না।’
পল্টন থানা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মারুফুল ইসলামের সঞ্চালনা ও থানা আমীর শাহিন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ আমরা রোকন সমাবেশ করছি কোনো ভয়-শঙ্কা ছাড়া। এর আগেও আমাদের সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু তখন বহু বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেকে সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এখন আর সেই কঠিন মুহূর্ত কাটাতে হচ্ছে না। এই সুন্দর পরিবেশ পাওয়ার পেছনে মূল অবদান ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আহত ছাত্র ভাইদের ত্যাগ কোনোদিন ভোলার নয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি—একজনের একটি হাত নেই। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন, উত্তরে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাই ভালো আছি।’
তিনি আরও বললেন, ‘পুলিশের গুলিতে একটি হাত হারিয়েছি, এতে কোনো দুঃখ নেই। দেশের প্রয়োজনে অন্য হাতও দিয়ে দেব।’ এই মানুষদের চিন্তা ছিল আমরা পুরোনো পদ্ধতিতে থাকব না—দেশে নতুন কিছু হবে। কিন্তু তাদের সেই চিন্তার বিপরীতে আজ আমরা অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি। আহত ভাই ও শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মা-বাবারাও যদি গণহত্যাকারীদের বিচার না পান, তবে আগামী নির্বাচন তারা মেনে নেবেন না।
হেলাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক খারাপ। নির্বাচনী পরিবেশ ভালো থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা চেয়েছিলাম সরকার স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুক—এই পরিস্থিতিতেও নির্বাচন করা সম্ভব। তাহলে মানুষের আস্থা তৈরি হতো, জাতীয় নির্বাচনেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করত। আমরা বলেছিলাম, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হোক, সেই সঙ্গে সংস্কারও করা হোক।
এদিকে জুলাই ঘোষণাপত্রও এখনো অসম্পূর্ণ। এটিকে আগে পূর্ণাঙ্গ সনদে রূপ দিতে হবে, যা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন সেই সংবিধানের আলোকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা গেলে দেশ ও জাতি তা মেনে নেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। দেশে নির্বাচন হবে আর আমরা অংশ নেব না—এটা হতে পারে না। মানুষ এখন বিশ্বাস করছে জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার জন্য প্রস্তুত। সেই কারণেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, আমরা মনে করি ইসলামপন্থীরা যদি এক হয়ে যায়, তবে কোনো অপশক্তি আমাদের ঠেকাতে পারবে না। এখন পর্যন্ত আমরা এক আছি। আওয়ামী লীগও আমাদের ‘ডানপন্থী’ বলেছে, ভারতও আমাদের ‘ডানপন্থি’ বলেছে, কোরআনেও আমাদের ডানপন্থী বলা হয়েছে। ইসলামী আদর্শের সব রাজনৈতিক দল যদি এভাবেই ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।