জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে লাশের সঙ্গে যে বর্বরতা ও নির্মমতা চালানো হয়েছে, তা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে, এই সাভার আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। হত্যা করে শ্রমিকদের লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, লাশের সঙ্গে এমন নির্মমতা, মনে হয়, কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে সাভারের আশুলিয়ার দারুল ইহসান মাদ্রাসার মাঠে এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে শহীদ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পরিবারের সম্মানে ‘নারকীয় জুলাই’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর জুলাইয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের সরাসরি কোনো স্বার্থ হয়তো জড়িত ছিল না। কারণ, তাঁরা কোনো সরকারি চাকরি আশা করেননি। তাহলে প্রশ্ন আসে, পোশাক কারখানার শ্রমিক, রিকশার চালক, দিনমজুর, ভ্যানচালক, অটোরিকশাচালক, ট্রাকচালক, হেলপার, দোকানের সহকারী কিংবা রেস্তোরাঁর কর্মী অথবা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কেন সেদিন রাজপথে নেমে এসেছিলেন? একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি একটিই কারণ খুঁজে পাই, এর কারণ একটাই, দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী মানুষ বিশ্বাস করেছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় ক্ষমতালোভী যে ফ্যাসিস্ট বসে আছে, তারা যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, তাহলে কৃষক, শ্রমিক, জনতা কেউ তাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার ফেরত পাবে না। কারোরই কোনো ন্যায্য দাবি আদায় হবে না। দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করেছে সেদিন, যে ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সক্ষম হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হবে এবং এ কারণে ফ্যাসিস্টদের সেই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক শ্রমজীবী মানুষ নির্দ্বিধায় শহীদী মৃত্যুকে সাহসের সঙ্গে সেদিন আলিঙ্গন করেছিলেন।
‘সুতরাং সম্মানের সঙ্গে আমাদের স্মরণ করা দরকার, স্মরণ রাখা দরকার, স্রেফ একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ রাজপথে জীবন উৎসর্গ করেননি সেদিন। এই জনগণ একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। ফ্যাসিবাদ হটিয়ে রাষ্ট্র রাজনীতিতে জনগণের অধিকার, আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায়, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায় আত্মত্যাগ করেছেন। আজ যদি শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ জানতে চান, সেই শহীদের আত্মা যদি জানতে চায়, গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শ্রমজীবী মানুষ শাহাদাতবরণ করেছে। কিন্তু বর্তমানে সরকারে ও প্রশাসনে শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষের অবস্থান কী? পলাতক ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেখানেইবা তাদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? গণ-অভ্যুত্থানে অংশীজন শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষের অবদানকে স্মরণ করে, আমাদের কথা আমরাই বলব এই শিরোনামটি আমি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত বাস্তবধর্মী বলে মনে করি।
‘প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথাটি নিজে বলতে পারেন, নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, নিজের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন কিংবা সরকার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এই রাজনীতিটিই বিএনপি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে নির্বাচন। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথা নিজে বলতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার স্বার্থে দেশে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অগ্রাধিকার দেয়।’
বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে আশুলিয়ার দারুল ইহসান মাদ্রাসার মাঠে এ জনসভা শুরু হয়। প্রথমে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সবাই। পরে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত-নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
জাতীয়তাবাদী দল ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরসহ প্রায় কয়েক অঞ্চলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাভারের (ঢাকা-১৯) সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান সালাহউদ্দিন বাবুসহ বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী।