২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট মাসের আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘হাসিনা মানবজাতির কলঙ্ক। তাঁকে কোনো দিন ক্ষমা করা যাবে না। হাসিনা মায়েদের একটা কলঙ্ক। আমাদের প্রথম কাজ হবে, এদের বিচার করা।’
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে ‘গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪ জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা; সবুজ পল্লবে স্মৃতি অম্লান’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে বৃক্ষরোপণের এই কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও আমরা বিএনপি পরিবার।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হবে, এদের বিচার করা। দ্বিতীয় কাজ হলো, পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যাঁরা আহত হয়ে আছে চোখ হারিয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। এটা না হলে ভবিষ্যৎ এবং জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।’
শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি ফান্ড গঠন করা হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে একটা ফান্ড রেইজ করব। এসব পরিবারকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব। ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান “আমরা বিএনপি পরিবার” সংগঠনের মাধ্যমে কাজটি করছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভিন্ন মত থাকবে। বহুমাত্রিক মত থাকবে। কেউ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবে। কেউ সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করবে। সবগুলোকে মিলিয়ে একটা রেইনবো স্টেট নির্মাণ করতে অনেক আগেই খালেদা জিয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৩১ দফা দিয়েছেন। বর্তমানে সংস্কারের যে প্রস্তাব আসছে, তার প্রতিটি প্রস্তাব ২০২২ সালে দিয়েছিল বিএনপি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কতজন শহীদ হয়েছেন, কতজন নিহত হয়েছেন, আমরা কত ত্যাগ স্বীকার করেছি, কারা কী কাজ করেছি, এই বিতর্কে যেতে চাই না। কারণ ওটা মনে হয় স্বার্থপরতার একটা ব্যাপার আছে। আমার দায়িত্ব হচ্ছে জাতিকে ওপরে তুলতে হবে। যে প্রাণগুলো গেছে, যে জীবনগুলো গেছে, তাঁরা কিন্তু ঘোষণা দিয়েছেন আমরা এই ফ্যাসিস্টকে সরাব, জাতিকে স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করব। সে জন্য লক্ষ্য একটাই, আমরা একটা সত্যিকার অর্থে উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ চাই, পরিবর্তন চাই, আমরা আর দুর্নীতি চাই না, ঘুষ চাই না, হত্যা চাই না, নির্যাতন চাই না। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে স্বস্তি নিয়ে চলতে পারে, সে ধরনের রাষ্ট্র চাই।’
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটা সরকার তৈরি করতে পারব বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল। নির্বাচিত ওই সরকার শহীদদের মূল্যায়ন করবে, মর্যাদা দেবে, বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জুলাহ–আগস্টের আন্দোলনে শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন, শহীদ গোলাম নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, শহীদ শাফাওয়ান আক্তারের বাবা আক্তারুজ্জামান লিটন, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বাবা মাহবুবুর রহমান বক্তব্য দেন। তাঁরা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ তৈরি করার প্রত্যাশা জানিয়ে শহীদ পরিবারের পাশে থাকার অনুরোধ জানান।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খান বক্তব্য দেন। আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির।
অনুষ্ঠান শেষে জিয়া উদ্যানে জুলাই শহীদদের নামে প্রায় এক শ গাছ লাগানো হয়। প্রতিটি গাছে শহীদের নামফলক ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ ও কৃষক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারা দেশে তারা দশ লাখের মতো গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে।