ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদ ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং শাসনপদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। শনিবার জেএসডির কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আবদুর রব বলেন, গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব কিংবা সংগ্রাম শুধু মাত্র স্বতঃস্ফূর্ততায় সফল হয় না। বরং শেষ পর্যায়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আন্দোলন-সংগ্রাম তখনই সাফল্য লাভ করে যখন তা লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে এবং সংগ্রামীতত্ত্ব সমৃদ্ধ নেতৃত্ব এবং নিষ্ঠ সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হয়। ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংগ্রাম বা লড়াইকে পরিচালিত করতে হবে গণমানুষের মতাদর্শে দীক্ষিত যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত সংগঠন দ্বারা। আর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের করণীয় হচ্ছে- ফ্যাসিবাদ উচ্ছেদ ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং শাসনপদ্ধতি প্রবর্তন করা।
সভায় জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন রাজনৈতিক প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বাস্তবতা হাজির হয়েছে। শাসনব্যবস্থা রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের মুক্তির প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, বাংলাদেশের শাসন-ক্ষমতা রূপান্তরের জন্য বিকশিত সমাজ শক্তিকে রাজনৈতিক-সংগ্রামে উপনীত করে রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এটাই রূপান্তরের পথ। এটাকেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, এ যাবৎ বাংলার মানুষ আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। জনগণ তথা শ্রমজীবী-কর্মজীবী এবং পেশাজীবীসহ সকল স্তরের নারী, পুরুষ, কিশোর, যুবা, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশে একাধিকবার গণঅভ্যুত্থানও সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। জনগণ বারবার প্রতারিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিকধারা জনগণের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারেনি। ফলে জনগণ ঘরে ফিরে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বারবারই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে।
প্রস্তাবনা উত্থাপনে আরও বলা হয়, বারবার এই ‘বিশাল গণআন্দোলন’ এবং ‘গণঅভ্যুত্থান’র পর প্রত্যাশিত আশা-আকাঙ্ক্ষা অর্জনে ‘হতাশা আর ব্যর্থতার উপর্যুপরিচক্র থেকে জাতিকে বের হয়ে আসতে হবে। সফল গণঅভ্যুত্থান সংঘটনে যেমন প্রয়োজন তেমনি দেশ ও জাতি বিনির্মাণেও সকল শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবীর অংশীদারিত্ব দরকার। এ জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সকল শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব এবং কৃত্যভিত্তিক প্রশাসন কায়েমই হবে, গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের স্থায়ীরূপ। তাহলেই আর বারবার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন হবে না। কারণ এই প্রক্রিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনরাই রাষ্ট্র বিনির্মাণে নিয়োজিত থাকবেন। এতে জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বশাসন কায়েম হওয়ায় ফ্যাসিবাদও সমূলে উৎপাটিত হবে।
এতে আরও বলা হয়, স্বাধীন দেশের উপযোগী ও জনগণের অভিপ্রায়মুখী গণমানুষের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্য অর্জনে দেশে দ্বিতীয় ধারার রাজনীতির অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন এবং কার্যকর ঐক্যের জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণও আবশ্যক। সুতরাং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদে অংশীদারিত্বের গণতন্ত্রের মতাদর্শের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ জেএসডিকেই গ্রহণ করতে হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন বক্তব্য রাখেন জেএসডির সিনিয়র সহ সভাপতি তানিয়া রব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজ মিয়া, অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, সোহরাব হোসেন, দেওয়ান ইস্কান্দার রাজা চৌধুরী, আমিন উদ্দিন বিএসসি, আব্দুল লতিফ খান, অ্যাডভোকেট মিয়া হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঈনুর রহমান প্রমুখ।