বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না এ দলের নেতাকর্মীরা। সেই আওয়াজ উঠাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগের এই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচার দাবি করছি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একদিকে চান আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হোক, আবার আপনারা তাদের বিচার করবেন না, পুলিশ দিয়ে তাদের কর্মসূচি বাধা দেবেন, এ তো স্ববিরোধীতা। এটা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, বৈপ্লবিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাহার করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিতাড়িত করেছে।
আওয়ামী লীগ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য মাঠে নামতে দেবেন না। তা মানি, সমর্থন করি। কিন্তু এভাবে কতদিন রাজপথে পুলিশ দিয়ে ঠেকাবেন?
তিনি বলেন, আপনারা বলবেন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে চাই না, আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে থাকতে পারবে না। কিন্তু কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আইনি কোনো পদক্ষেপ কি এই সরকার নিচ্ছে? না।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বলেছিলাম, সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইন সংশোধন করার দাবি জানিয়েছিলাম, এই দেশের মানুষ দাবি জানিয়েছিলো। এ সরকার অধ্যাদেশ এবং আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। হঠাৎ ক্যাবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা করা যাবে না। কেন?
তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হোক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না। সংবিধানে বিধান সংযোজন আছে, সে অনুযায়ী আপনারা আইন করুন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, কেউ কেউ বলতে শোনা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাদের বিচার হচ্ছে সেই বিচারে হয়তো অবজারভেশন আসবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিষয়ে, সেটা অত্যন্ত দুর্বল অবজারভেশন হবে। তখনো আপনাদেরকে প্রশাসনিক আদেশ দিতে হবে, আইন প্রণয়ন করতে হবে, সেই অবজারভেশনের নিরিখে। এখন যদি আপনারা সোচ্চার হন বিচারের জন্য, বাংলাদেশের মানুষ চায় বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির একদম নির্মূল হয়ে যাক, সেই ব্যবস্থা আপনারা নিতে পারেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কারের মধ্যে সে রিপোর্ট আসবে কি না, জানি না। তবে নিশিরাতের বিচারকদের বহাল রেখে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে স্বাধীন করা যাবে কি না, রাখা উচিত হবে কি না তাদের বহাল রেখে আমার সন্দেহ আছে।
সরিষার মধ্যে ভূত রেখে কখনো সরকার সফল হতে পারবে না এমন সতর্কবাণী দিয়ে তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা হোক, প্রশাসনিক ব্যবস্থা হোক, নির্বাচনি ব্যবস্থা হউক সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনাকে ক্লিন করতে হবে৷ একটি গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা যে সাংবিধানিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই সে সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেন নির্বাচন মুখী সংস্কারের দিকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য যে সমস্ত সংস্কার স্বল্প মেয়াদে সংস্কার করা দরকার সেগুলো চিহ্নিত করুন, সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করুন, সেগুলোর আইনি সংস্কার করুন। আইনি সংস্কারের পর যদি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন হয় সেটা করবেন, সেজন্য কত সময় লাগবে সেটা আমরা জানি।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানসহ আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের সদস্যরা।