ঘটনা গত বছরের ৫ আগস্ট। কলেজপড়ুয়া একটি ছেলেকে ধরে আছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। চড়-থাপ্পড়, কিল- ঘুষি মারছে। কেউ কেউ আবার কলার ধরে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। একটু দূর থেকেই দৌড়ে এলো এক পুলিশ সদস্য। কাছে এসেই হৃদয়ের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দিলেন। গুলির বিকট শব্দ। মাত্র ৩ সেকেন্ডেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হৃদয়। ছটফট করে হাত-পা নাড়তে থাকেন। দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তবে পারেননি। একটু পরই নিথর হয়ে যায় মাটিতে পড়ে থাকা হৃদয়ের দেহ।
স্রোতের বেগে রক্ত বের হতে থাকে। অল্প সময়ে রাস্তা লাল হয়ে যায়। পরনের কাপড় ভিজে যায়। গুলি করেই পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার তারা হৃদয়ের কাছে ফিরে আসে। এসে নিথর দেহ পা দিয়ে ঠেলে দেখতে থাকে মৃত্যু হয়েছে কিনা। পরে ৪ জন পুলিশ সদস্য মিলে হৃদয়ের গুলিবিদ্ধ মরদেহ হাত-পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে দূরে নিয়ে যায়।
নিহত হৃদয়ের লাশ তার স্বজনদের ফেরত দেয়নি পুলিশ। লাশ কোথায় রাখা হয়েছে-দাফন করা হয়েছে নাকি ফেলে দেওয়া হয়েছে, তা এখনো জানতে পারেনি হৃদয়ের পরিবার।
এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে যে কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার নাম আকরাম। গত ৬ সেপ্টেম্বর আকরামকে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পারাইল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৩/২৫।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ একটি মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম কলেজছাত্র হৃদয়কে হত্যার ভিডিও প্রদর্শন করেন। ট্রাইব্যুনালের বড় স্ক্রিনে যখন ভিডিওটি প্রদর্শিত হচ্ছিল তখন সবার চোখ টলমল করছিল। নেমে আসে পিনপতন নিরবতা।
এদিন চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালে জানান, কনস্টেবল আকরাম জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। হৃদয়ের লাশ পুলিশ ওইদিন তুরাগ নদীর কড্ডা ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়।
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।