বরেণ্য শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বন্ধু, সহকর্মী, শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে আসেন তাঁরা। সেখানে তাঁকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।
আজ বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। তখন চলছিল তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজেই প্রিয় মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন তাঁরা। প্রায় ১টা নাগাদ তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিককে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন সৃহৃদ, তাঁর শিক্ষক ও সহকর্মীরা। এক কথায় তাঁকে বিনয়ী, নিরহংকারী ও নির্লভ এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আমার ছাত্র ছিলেন, পরে সহকর্মী হয়েছেন। ছাত্র হিসেবে যে মেধার পরিচয় দিয়েছেন, শিক্ষক হিসেবেও তাঁর মেধার বিকাশ অব্যাহত ছিল। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষক হিসেবে অসাধারণ ছিলেন। তাঁকে সবাই ভালোবাসত। তার প্রমাণ এই বৃষ্টির মধ্যেও এত লোকের সমাগম। তিনি সাহিত্যিকও ছিলেন। একদিকে শিক্ষক ও সাহিত্যিক হওয়া সাধারণত ঘটে না, কিন্তু মনজুরের বেলায় ঘটেছে। অসাধারণ মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।’
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি ফুলার রোডে স্যারের পাশের বাসায় থাকতাম। স্যারকে যখনই দেখতাম উনি মন জুড়ানো হাসি দিতেন। কারও হৃদয় খুব বিশুদ্ধ না হলে এমন হাসি দেওয়া যায় না। প্রবল জনপ্রিয় একজন শিক্ষক ছিলেন। খুব বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তাঁর সাথে রাজনৈতিক বিশ্বাসে পার্থক্য ছিল। কিন্তু উনি নির্লোভ ছিলেন। যেটাই কিরতেন বিশ্বাস ও বিবেক থেকে বলতেন, করতেন। উনি নতুন লেখকদের প্রচণ্ড সাপোর্ট দিতেন। তাঁর চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আজকের দিনটা খুবই কষ্টের। একজন লেখক-বিশ্লেষক আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছেন। তিনি এমন একজন মানুষ, যাকে সবাই সম্মান করে। তাঁর জ্ঞানকে, তাঁর প্রজ্ঞাকে সম্মান করে। উনি পরিবেশ বিষয়ে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। পরিবেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লিখেছেনও। আমি উনাকে ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের ভেতর থেকে একজনকে হারাল।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বোন সাঈদা সাত্তার বেবি বলেন, ‘এখন আসলে কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। গত আট দিন হাসপাতালে ছিলাম। ছাত্রছাত্রীদের, শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা দেখেছি। তাতে মনে হয়েছে, আমার ভাই শুধু ভালো শিক্ষকই ছিলেন না, সকলের প্রাণের মানুষ ছিলেন।’
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার অন্যপ্রকাশ পরিবারের একান্ত আপনজন ছিলেন। আমাদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন করে বলার কিছু নেই। সারা দেশের মানুষ যে ভালোবাসা দেখিয়েছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিত্বরা।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে আনা হয়। সেখানে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে মনজুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ জোহর তাঁর জানাজা হয়। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।
গতকাল বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।