রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
জাতীয়

চোখের জলে বিদায় সাংবাদিক বিভুরঞ্জনকে

সন্ধ্যা নামার আগে আগে রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশানঘাটের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে কান্নার রোলে। শেষবারের মতো কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা। নীরবে দাঁড়িয়ে বারবার চোখ মুছছিলেন স্ত্রী-কন্যা ও স্বজনেরা।

শনিবার প্রথিতযশা সাংবাদিক আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক বিভুরঞ্জন সরকারের শেষকৃত্য সম্পন্নকালে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়। ধর্মীয় আচার শেষে এই কীর্তিমানের মুখাগ্নি করেন তাঁর ছেলে ঋত সরকার।

শ্মশানে দাঁড়িয়ে বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, এই ক্ষতটির জন্য আমাদের পরিবার দায়ী, এর জন্য আমাদের সমাজ, রাজনীতি দায়ী, যে প্রতিষ্ঠানে আমরা একেকজন চাকরি করি, তারাও দায়ী। আমরা কেউ শুশ্রূষার দায় নিই না। আমরা ওপরে ওপরে ভালো থাকার, ভালো রাখার চেষ্টা করি।

বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর অপ্সরা নামের ভাড়া বাসায় বিভুরঞ্জনের মরদেহ আনা হয়। স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় মুহূর্তেই ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। স্ত্রী শেফালী সরকার ভেঙে পড়েন স্বামীর নিথর দেহের সামনে। প্রতিবেশী, বন্ধু আর সহকর্মীদের ভিড়ে বাড়িটি তখন হয়ে ওঠে শোকের সমুদ্র।

খেলাঘরের প্রেসিডিয়াম অধ্যক্ষ শরীফ উদ্দিন আহমেদ তখন আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, ‘আমরা তো উনার লেখার ভক্ত। তাঁর মতো খ্যাতিমান সাংবাদিকের এমন বিদায়, মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টের।

সুদূর বগুড়া থেকে এসেছিলেন বিভুরঞ্জনের ছোট বোন ভারতী সরকার। চোখ মুছতে মুছতে তিনি শুধু বলতে পারলেন, আমার ভাই কীভাবে মরলো, এখনো কিছুই জানি না।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয় ময়নাতদন্ত। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ মো. এহসানুল ইসলাম জানান, শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে দাঁত, চুল, লিভার, কিডনি ও পাকস্থলী সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুরে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করে পরিবারের কাছে।

ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকারসহ সহকর্মীরা কাঁপা হাতে গ্রহণ করেন সেই লাশ। ফ্রিজিং গাড়িতে করে লাশ ফিরিয়ে আনা হয় রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসায়।

৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন ছিলেন সাংবাদিকতার এক নিরলস সৈনিক। আজকের পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর খোঁজ মিলছিল না তাঁর। পরিবার সেদিন রাতেই রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। পরদিন মুন্সিগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

যে মানুষটি মানুষের শোষণ-বঞ্চনা ও অধিকারের জন্য লিখেছেন নিরন্তর, আজ তিনিই হয়ে গেলেন এক মর্মন্তুদ বেদনার কাহিনি। সহকর্মী, বন্ধু, পরিবার সবাই শুধু একটাই কথা বলছেন, সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের শূন্যতা পূরণ হবার নয়।

এই সম্পর্কিত আরো