আজ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ অধ্যায়ের প্রধান এবং প্রথম কাজ হচ্ছে নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজন করা।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্বৃত্ত করে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের দ্বিতীয় বৈঠক।
শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সূচনা বক্তব্যে বলেছেন ৫ তারিখে (৫ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম অধ্যায়ের শেষ হয়েছে। গতকাল (৬ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনকে ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বলা হয়েছে। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন আজ থেকে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু। দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রধান এবং প্রথম কাজ হচ্ছে নির্বাচন সুন্দরভাবে করা।
তিনি বলেন, এছাড়া প্রাইমারি কাজগুলোর মধ্যে আমাদের আরও দুটো কাজ আছে। সংস্কার-সংস্কারের বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একটা সংবাদ সম্মেলন করবেন। তিনি আরও হাইলাইট করবেন জুলাই চার্টারে, বিশেষ করে সংবিধানের সংস্কারের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে তাদের কি কি অগ্রগতি আছে সে বিষয়ে জানাবেন। আর হচ্ছে বিচার। বিচার নিয়ে প্রায়ই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আপনাদের জানান। সামনে তিনিও আপনাদের নিয়মিত আপডেট দেবেন, বলেন তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে বলতে পারি চারটি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ২৭টি অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। ১৬টির চার্জশিট হয়েছে। পুরো বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদ প্রতিনিয়তই আপডেট নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
আজকের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের তারিখের বিষয়টা নির্বাচন কমিশন দেখেন। তবে যে টাইম লাইন অন্তর্বর্তী সরকার দিয়েছে, এখন নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট তারিখ জানাবেন। এটা তাদের দায়িত্ব, তারাই আপনাদের জানাবেন।
নির্বাচনের বিতর্ক এড়াতে এসপি-ওসিদের পদায়নে লটারি হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসি (জেলা প্রশাসক) নিয়োগে বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অতি শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন। নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর আর নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে সবার মূল ফোকাস হচ্ছে কীভাবে একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন করা যায়। এটাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
সেটা করার জন্য প্রশাসন কি ভূমিকা নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা করার জন্য আমাদের প্রচুর মিটিং হচ্ছে। গত এক মাসে প্রধান উপদেষ্টা দুইটা মিটিং করেছেন নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বাহিনীদের নিয়ে। অনেক কথাবার্তা হয়েছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে কত বেশি আমরা আনসার, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী কত বেশি নিয়োজিত করতে পারি। সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগে তো ছিল ৮ লাখের মত দেওয়া যাবে। তবে এখন আরও বেশি ৫০ হাজার দেওয়া যায় কি না, সেই চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে আগে এটা ধারণা দেওয়া হয়েছিল ৬০ হাজার ট্রুপস থাকবে। এখন চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে, কত বেশি সংখ্যক নিয়োজিত করা যায়। এটা প্রতিনিয়ত রিভিউ হচ্ছে। আমিতো বলবো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল কাজ হচ্ছে নির্বাচন।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ আস্থা তৈরি হয়েছে কি না- জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা মোটামুটি সব রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের সঙ্গে তো এর আগে অনেক দফা আলোচনা হয়েছে। সামনে আরও আলোচনা হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের সংলাপ চলছে। আমরা নিশ্চিত যে আমাদের খুব ভালো একটা নির্বাচন হবে। প্রধান উপদেষ্টা বার বার বলেছেন, আমাদের সমস্ত চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো একটা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারা।
বাণিজ্য ও সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে উপদেষ্টা পরিষদের অভিনন্দন
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দুটি শুভেচ্ছা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে অভিনন্দন জানিয়েছে। কারণ তিনি সফলভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে যে আলোচনা সেটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, এখন যারা আমাদের প্রতিযোগী তাদের থেকে আমরা মোটামুটি একই বা ভালো অবস্থানে আছি।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তাফা সরয়ার ফারুকীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। জুলাইয়ের ৩৬ দিনের যে অনুষ্ঠানমালা, তিনি নিজে থেকে দাঁড়িয়ে থেকে সেটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটা সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।