‘মব ভায়োলেন্স’ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বলা হচ্ছে মব তৈরি হচ্ছে- আমি এটাকে মব বলছি না, বলছি প্রেশার গ্রুপ। সেটা তৈরি হচ্ছে আগের সাংবাদিকতার ব্যর্থতার কারণে।’ তবে তিনি এটাও বলেছেন- এই মন্তব্য তার ব্যক্তিগত, সরকারের নয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব বলেন।
সেমিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
প্রেস সচিব বলেন, ‘সেটি তৈরি হওয়ার গ্রাউন্ড কেন তৈরি হচ্ছে! কেননা, সে তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১৫ বছরে তো তার (প্রেশার গ্রুপ) মিনিমাম সিভিল লিবার্টি রাখা হয়নি।’
তিনি বলেন, “সে তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখন তার যে কনসার্ন- গত বছরের ২৮ জুলাই বাংলাদেশের শীর্ষ সাংবাদিকরা যে শেখ হাসিনাকে বলেছেন– ‘এদেরকে খুন করেন’, ‘পুলিশ কেন গুলি করছে না’, কেউ কি বলেনি? এরা তো শীর্ষ সাংবাদিক, শীর্ষ মিডিয়া হাউসের। এখন এই জিনিস তো আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এই ভয় থেকে এই প্রেশার গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। এটার সমাধান কী, সব দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, সরকার যতটুকু পারে, সেই কাজটা সরকার করছে। যারা আস্থার জায়গা নষ্ট করেছেন, তারা কিন্তু কেউ সেই কথা বলছেন না। নতুন রাজনৈতিক সরকারকে সামনে রেখে তারা আবারও তাদের খুঁটি সাজাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার কোনো ধরনের কোনো উত্তরণ হবে না।”
শফিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, এটা একদম ফালতু কথা। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এতই স্বাধীন, যে উন্নত বিশ্বেও এত স্বাধীনতা নেই। মানুষ এখন ভিডিও দেখে সংবাদ গ্রহণ করছে। এই ভিডিও বেশির ভাগই অলস সাংবাদিকতায় করা, মিথ্যায় ভরপুর। সারা দিন ধরে কিছু কিছু টকশোতে এরা মিথ্যা কথা বলছে। এটা অপসাংবাদিকতা হলেও এক ধরনের সাংবাদিকতা। এটা করার ফলে মানুষ পত্রিকা পড়ছে না তো।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় দেখেন, সোশ্যাল মিডিয়া সংবাদের সবচেয়ে বড় উৎস, বাংলাদেশেও এটা হচ্ছে। মানুষ ওটা গ্রহণ করছে। এটাকে কীভাবে মনিটর করবেন! আমার নামে যা তা বলছে, উপদেষ্টাদের নামে যা তা লিখছে, নোংরামির তো একটা সীমা আছে। কিন্তু আমি যদি বলি- যেটা করছেন সেটা অন্যায়। আপনি আমার নামে ৪০ মিনিটের একটি ভিডিও বানিয়েছেন, তার মধ্যে ৩২০টা মিথ্যা আছে। আপনি বলবেন- আমার ওপর প্রেশার হচ্ছে, সরকার আমাকে টার্গেট করেছে, তারপর আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন।’
এ সময় জার্নালিস্ট প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স দরকার আছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘একই সময়ে আপনার অপসাংবাদিকতার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কীভাবে সুরক্ষা দেবেন। তার সুরক্ষাও তো আপনার চিন্তা করা উচিত। একজন সচিবের নামে যে মিথ্যা একটা নিউজ করা হলো, এই নিউজের স্থায়িত্ব হয়ে গেছে অনন্তকাল। ১০০ বছর ধরে, উনি যখন ওনার ছেলে, ওনার নাতি গুগলে সার্চ করলে দেখবে, নিউজটা আসছে। তার নামে এই মিথ্যা নিউজের সমাধান কি দেবেন না?’
তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্বে তো এর মডেল আছে, তারা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে জরিমানা দিয়ে। ফালতু কথা বলে একজনের নামে পার পেয়ে যাবেন, সরকারি কর্মকর্তা হলে কিছু সুরক্ষা কম, কিন্তু আরেকজনের নামে মিথ্যা কথা বলে পার পেয়ে যাবেন- বিদেশে, যুক্তরাজ্যে এটা চিন্তাও করতে পারবেন না। আপনাকে মিলিয়ন পাউন্ডের জরিমানা দিতে হবে। আমাদের এখানে তো এ ব্যবস্থা নেই। এখানে যে যা ইচ্ছা বলে দিতে পারে। আমি যখন দায়িত্বের ওই পাড়ে ছিলাম, তখন এটা অনুভব করিনি। এখন এসে দেখছি যে, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান প্রধান তাদের ন্যূনতম কোনো সুরক্ষা নেই। তার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা লেখা যায়।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রেশার গ্রুপ সম্পর্কে মন্তব্য আমার ব্যক্তিগত, এটি সরকারের অবস্থান না।’