ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের চাপ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাকে ফেরত পেতে কূটনৈতিক পত্র দেয়া হয়েছে ভারতকে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, শেখ হাসিনাকে আনা গেলে বিচারের কাজটি ভালোভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে।
তবে দুই দেশেই সরকারের ভেতরের ও বাইরের বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শেখ হাসিনা নিজে থেকেই দেশে ফিরে যে বিচারের মুখে পড়তে চাইবেন—এমন ইঙ্গিত এখনো মিলছে না। আইনি সব জটিলতা মিটিয়ে তাকে ফেরত আনা সফল করতে হলে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
আর শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ভারতের জন্য মোটেও সহজ নয়। সব মিলিয়ে তাকে ফেরত এনে তার উপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করা একটি জটিল, সময়সাপেক্ষ, এমনকি প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার।
মেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়টিতে দুই দেশেই অভ্যন্তরীণ রাজনীতির যোগসূত্র রয়েছে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে—এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার মহেশ সাচদেব বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য দেয়া কূটনৈতিক পত্র সূচনামাত্র। তাকে ফেরত চেয়ে যে অনুরোধ করা হয়েছে, সে অনুরোধের বিরুদ্ধে তিনি চাইলে আদালতে যেতে পারেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, সরকারি চ্যানেলে নয়াদিল্লি থেকে কোনো জবাব আসেনি। বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো উত্তর না আসে, তাহলে বাংলাদেশ থেকে একটি অনুস্মারক চিঠি পাঠানো হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে পারে তাহলে বিচারটা আরো ভালোভাবে করা সম্ভব হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে কূটনৈতিক পত্র দেয়ার কথা জানান। ওই দিনই সন্ধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল কূটনৈতিক পত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের এক বিশ্লেষক মনে করেন, প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চাওয়া হয়েছে। সেটা অনুযায়ী দুই রাষ্ট্র দুটি পক্ষ রয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা নিজেও একটি পক্ষ। ফলে রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের দিক থেকে তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয় আছে। তিনি নিজে ফিরতে চাইবেন কিনা, ঢাকা ফিরে বিচারকে আদালতে মোকাবিলা করবেন কিনা, সেটাও ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ভারতের হরিয়ানার ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক ড. শ্রীরাধা দত্ত বলেন, শেখ হাসিনার দিল্লি যাওয়া, তাকে ফেরত চাওয়া ও ফেরত দেয়ার পুরো বিষয়টির মধ্যে রাজনীতি আছে। বিষয়টি দুই দিকের জন্য খুবই জটিল। কাজেই এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, তাকে ফেরত দেয়ার ব্যাপারটি রাতারাতি ঘটবে না।