✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
জাতীয়

৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার

সরকারি সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বা কোনো যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়ার যে কর্মসূচি শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবি করে নিউ মার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি তারা দিয়েছিলেন, সে অবস্থান থেকেও তারা সরে এসেছেন।

মঙ্গলবার বিকালে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. মুঈনুল ইসলাম কর্মসূচি থেকে সরে আসার কথা জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের সামনে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলতে না দেওয়া ও নিউ মার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছিলাম সেটি প্রত্যাহার করে নিলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত করে ঢাকার সরকারি সাত কলেজকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে আনার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রোববার সন্ধ্যায় পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি মামুন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। সেখানে তিনি ‘দুর্ব্যবহার’ করেন বলে পরে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।

এর প্রতিবাদে রাতে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে সায়েন্সল্যাব মোড়ের অবরোধ থেকে মিছিল নিয়ে প্রোভিসি মামুন আহমেদের বাসভবন অভিমুখে রওনা হন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

মিছিলটি নীলক্ষেত মোড় হয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আর সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেয় বলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

পুলিশের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলে তারা হামলায় জড়িত সবার বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল ৯টা থেকে নিজ নিজ কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন।

এমন পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।

তিনি ঘোষণা দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সাত কলেজের ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে।

পরে সোমবার রাতে ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে ব্রিফিংয়ে এসে নতুন কর্মসূচি দেন মুঈনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘মুখোমুখি’ অবস্থানে দাঁড় করানোর দায় নিয়ে উপউপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবের ওপর ‘হামলার’ ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার দায়িত্বশীলদের প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ক্ষমা’ চাইতে হবে।

এসব দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূরণ না হলে নিউ মার্কেট থানা ঘেরাও এবং সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ কোনো যানবাহন চলতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন মুঈনুল ইসলাম।

মঙ্গলবার দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ওই কর্মসূচি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত জানিয়ে রোববার রাতের ঘটনার জন্য আবারও প্রোভিসি মামুন আহমেদকে দায়ী করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা।

মুঈনুল বলেন, সেদিনের হামলায় বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মানুষের ইনভল্বমেন্ট থাকতে পারে। এজন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি মামুন আহমেদ স্যারকে দায়ী করব। তিনি যদি শুরুতে ক্ষমাটা চাইতেন, বা উদ্যোগ নিতেন, তাহলে এ ঘটনাটা ঘটত না। প্রোভিসির বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র একটা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের নিশ্চিত করা হয়েছে, প্রোভিসি মামুন আহমেদ আর সম্পৃক্ত থাকবেন না। তার পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে ওই দিনের ঘটনায় সাত কলেজের যে ছাত্র প্রতিনিধিরা ছিলেন, তারা ভিসি স্যারের সঙ্গে বসবেন, সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবসহ অন্য শিক্ষার্থীদের ওপর যে ‘হামলা হয়েছে, এর তদন্ত করতে তিন দিন সময় নিয়েছে সরকার।

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন মৌ বলেন, আমাদের ছয় দফা দাবির একটি মেনে নেওয়া হয়েছে। বাকি দাবিগুলো নিয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি পজেটিভ সিদ্ধান্ত আসবে।

তিনি বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছ। কোনো সেশন জট যাতে না হয়, সে বিষয়ে এখন কাজ করা হবে।

এই সম্পর্কিত আরো