বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো আবারও ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধের দাবি ‘নাকচ’ করেছেন। ফিফা কাউন্সিলের এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘ফিফা ভূরাজনইতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না।’
২০২২ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে, তখন কয়েকদিনের মধ্যেই ফিফাকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসনে পাঠায় ফিফা। সেসময় ঠিকই ‘ভূরাজনীতি’র ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল সংস্থাটি।
কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালালেও দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ন্যূনতম শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নেয়নি ফিফা। ইসরাইলের লাগাতার নির্বিচার হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। উপত্যকায় ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।
ফিফা কাউন্সিলের আলোচনায় এই ‘গণহত্যা’কে পাশ কাটিয়ে ফিফা সভাপতি বলেন, ‘ফিফায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে ফুটবলের শক্তিকে ব্যবহার করে বিভক্ত বিশ্বে মানুষকে একত্রিত করব। বর্তমানে ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হওয়া উচিত শান্তি ও ঐক্যের বার্তা। ফিফা ভূরাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে না, তবে এটি ফুটবলের ঐক্যবদ্ধকারী, শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী খেলাটিকে প্রচার করতে পারে এবং করতে হবে।’
ফিফার এমন ‘অমানবিক’ অবস্থানের পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইনফান্তিনোর সখ্যতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে ট্রাম্পের সঙ্গে এখন উষ্ণ সম্পর্ক ইনফান্তিনোর। যেহেতু ট্রাম্প ইসরাইলের কট্টর সমর্থক, তাই দেশটির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিয়ে এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চটাতে চান না ফিফা সভাপতি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৪২১ ফুটবলারকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর মধ্যে গত আগস্টে ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ খ্যাত ফুটবলার সুলেমান আল ওবেইদ ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারান।
গেল আগস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তুর্কি বার্তা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, দুই বছরে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৮০০ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদ প্রাণ হারিয়েছেন।
ক্রীড়াবিদদের ওপর এমন নির্মম হত্যাযজ্ঞের পরও বিষয়টিকে স্রেফ ‘ভূরাজনীতি’ বলে এড়িয়ে যাওয়া নির্দয় পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।