অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি-কে সাংবাদিক অ্যান্টোনেট লাটুফকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার দায়ে আদালত ১ লাখ ৫০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা দিতে আদেশ দিয়েছেন। বাংলায় দেশে মুদ্রায় যা ১ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি। তবে এই ক্ষতিপূরণের আগেও তাঁকে আরও ৭০ হাজার ডলার (৫৬ লাখ টাকারও বেশি) দিয়েছিল প্রতিষ্ঠান।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল কোর্টের বিচারপতি ড্যারিল রাঙ্গাইয়া জানান, এবিসি যাতে শিক্ষা নেয়, সে জন্যই অতিরিক্ত বড় অঙ্কের জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এ হিসেবে আগে পরে মিলিয়ে লাটুফ পাবেন ২ লাখ ২০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি)।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজা যুদ্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়ার পর লাটুফকে হঠাৎ করে সিডনির এবিসি রেডিও থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সপ্তাহব্যাপী উপস্থাপনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও মাত্র তিন দিন পর তাঁকে বলা হয় অনুষ্ঠান ছেড়ে দিতে। পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে ফাঁস হয়।
লাটুফের শেয়ার করা পোস্টটি ছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদন, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজার জনগণকে অনাহারে রাখার অভিযোগ আনা হয়। ইসরায়েল অভিযোগটি অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পরে জানায়, এ বিষয়ে তাদের কাছে যথেষ্ট যুক্তিসংগত প্রমাণ রয়েছে।
এবিসি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, লাটুফকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধসংক্রান্ত কিছু না বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁর পোস্ট প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালা ভঙ্গ করেছে। তবে আদালত রায়ে জানান, তাঁকে কখনো এমন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাঁর পোস্ট অবিবেচক হতে পারে, কিন্তু তাঁকে কোনো সুযোগ না দিয়েই শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বিচারপতি রাঙ্গাইয়া বলেন, শুরুর দিকে ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর চাপের মুখে এবিসি তাঁকে সরিয়ে দেয় এবং ব্যবস্থাপনা ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ বানায়। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘একটি লবিং গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে এবিসি তার কর্মী ও অস্ট্রেলিয়ার জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
লাটুফ দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমে কাজ করছেন এবং বর্ণবাদ, গণমাধ্যমে বৈষম্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকার জন্য পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে এভাবে ব্যবস্থা নেওয়ায় এবিসির স্বাধীনতা ও কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে দেশজুড়ে প্রশ্ন ওঠে এবং প্রবল সমালোচনার জন্ম দেয়।
এই ঘটনায় এবিসি ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে। তবে আদালত বলেছেন, চাকরিচ্যুতির তথ্য গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার ঘটনায় কারা দায়ী, তা খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির অনুশোচনা যথেষ্ট নয়।
রায়ের ফলে লাটুফকে আগামী ২৮ দিনের মধ্যে জরিমানার পুরো অর্থ প্রদান করতে এবিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।