শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

নেপালে অস্থিরতা, উদ্বেগ বাড়ছে ভারতে

তিন বছরের ব্যবধানে তিন প্রতিবেশী দেশের সরকার পতন দেখল ভারত। সবশেষ নেপালে যা হলো এর সঙ্গে গত বছর বাংলাদেশে এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার কিছু ঘটনার মিল আছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী হলেও নেপালের সঙ্গে সম্পর্কটা ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে নেপালের সীমান্ত ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটারের বেশি। যা যুক্ত উত্তরাখাণ্ড, উত্তর প্রদেশ, সিকিম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। ফলে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। 


মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেন, ‘নেপালের ঘটনা হৃদয়বিদারক। অনেক তরুণের প্রাণহানির ঘটনায় আমি মানসিক পীড়া বোধ করছি।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, নেপালে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

মঙ্গলবারই নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকও করেন মোদি। ২০২২ সালে বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আর দিল্লি সফরের এক সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। দুটি ঘটনাই ভারতকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছে।  

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা নেপাল সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা রাখেন। তিনি বলেন, কৌশলগত অবস্থানের কারণে দেশটির অস্থিতিশীলতা ভারতের জন্য উদ্বেগের। চীনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড নেপালের ওপারে অবস্থিত। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে যাওয়ার পথও সরাসরি নেপালের ভেতর দিয়ে গেছে।

অনেক নেপালি নাগরিক কাজের সূত্রে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। এ সংখ্যা তিন দশমিক ৬ মিলিয়ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংখ্যাটা আরও বেশি। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির অনেকের সঙ্গে ভারতীয়দের গভীর পারিবারিক বন্ধন আছে। তারা পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই দুই দেশে যাতায়াত করতে পারেন। এ ছাড়া, ১৯৫০ সালে হওয়া একটি চুক্তির আওতায় নেপালিরা ভারতে বিনা বাধায় কাজ করতে পারেন। নেপাল ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে এমন চুক্তি আছে শুধু ভুটানের।

এ ছাড়া, বহু বছরের পুরনো একটি চুক্তির আওতায় নেপালের ৩২ হাজার গোরখা সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করে। নেপালের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থানে প্রতিবছর হাজারো ভারতীয় হিন্দু প্রার্থনার জন্য যান। অন্যদিকে, কাঠমান্ডু ভারত থেকে প্রচুর তেল ও খাদ্যপণ্য আমদানি করে। ভারত-নেপাল বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

গতকাল বুধবার থেকে নেপালের পরিস্থিতি কিছু শান্ত হতে শুরু করলেও বিশেষজ্ঞরা ভারতকে কূটনৈতিকভাবে সতর্কতার সঙ্গে আগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, নেপালের বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ মূলত দেশটির তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে। যাদের সঙ্গে ভারত এতদিন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে।

এই তিনটি দল হলো- কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিএন–ইউএমএল), শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস এবং পুষ্পকমল দাহালের নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী কেন্দ্র)। হিমালয়ের কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারত ও চীন দুই দেশই নেপালে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এ কারণে এশিয়ার এই দুই পরাশক্তির বিরুদ্ধে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে।

কে পি শর্মার পরিবর্তে নেপালে কী ধরনের সরকার বা প্রশাসন গঠিত হবে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঙ্গীতা থাপলিয়াল বলছেন, নতুন সরকার বা নেতৃত্বের রূপ অনিশ্চিত থাকায় ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ। কিন্তু ভারতে তাঁকে আশ্রয় দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। নেপাল ও ভারতের মধ্যেও কিছু বিষয়ে বিরোধ আছে। অধ্যাপক সঙ্গীতা বলছেন, সেগুলোকে এখন অতিরিক্ত সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিতে হবে। নেপালে অনেক তরুণের কাজের ক্ষেত্র নেই। ভারত চাইলে তাদের কাজের সুযোগ ও শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপ দিতে পারে। 

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) নিষ্ক্রিয় থাকায় ভারতের জন্য প্রতিবেশীদের পরিবর্তনশীল ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে। পাকিস্তানের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। ভারতের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা বলছেন, পরাশক্তি হওয়ার বাসনায় ভারত প্রতিবেশীদের ওপর নজর রাখে। কিন্তু এই বাসনা পূরণের জন্য প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও গুরুত্বপূর্ণ।

এই সম্পর্কিত আরো