ভূমিকম্পে তছনছ আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল। রিখটার স্কেলে ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে বিপুল পরিমাণ ঘরবাড়ি। এতে কমপক্ষে ৮০০ জন নিহত হয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, অনলাইন আল জাজিরা। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছেন, শুধু কুনার প্রদেশেই নিহতের সংখ্যা কয়েক শত ছাড়িয়ে যাবে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযানে নামানো হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে।
অন্যদিকে ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা পড়ে আছেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। তাদের পরিণতি কি, তা নিশ্চিত নয়। ফলে নিহতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ৮ কিলোমিটার বা ৬ মাইল গভীরে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তালেবান সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডজনখানেক বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধারকাজে তারা সাহায্য করে। অনেক এলাকায় কেবল আকাশপথেই পৌঁছানো সম্ভব। কারণ ভূমিধস ও বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ভূ-কম্পন রাজধানী কাবুল থেকে শুরু করে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত অনুভূত হয়। কুনার প্রদেশের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ‘শত শত মানুষ নিহত’ হয়েছেন এবং আরও অনেকেই আহত।
একজন তালেবান কর্মকর্তা হেলিকপ্টারে মৃতদেহ সরানোর কাজ সমন্বয় করছেন। তিনি জানান, একটি গ্রামেই ২১ জন মারা গেছেন এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, এখনো অনেক জেলায় ভূমিকম্পের পরবর্তী আঘাত বা আফটারশক অনুভূত হচ্ছে। আরেকজন স্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘মৃতের সংখ্যা ভয়ঙ্কর।’ তবে এ মুহূর্তে সঠিক সংখ্যা কেউ জানাতে পারছেন না। কারণ দুর্গত এলাকা অত্যন্ত দুর্গম। কিছু এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। আবার কিছু এলাকায় ভূমিধস ও বন্যার কারণে সড়কপথ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নাঙ্গারহার বিমানবন্দরে দেখা গেছে, তালেবান সরকার হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আহতদের কুনারের দুর্গম এলাকা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সময় রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিমি বা ১৭ মাইল দূরে। নাঙ্গারহার ও কুনার প্রদেশে কমপক্ষে ২০ জন নিহত এবং ১১৫ জনের বেশি আহত হয়েছেন। কুনার প্রদেশে ভূমিধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযান কেবল আকাশপথে সম্ভব। অন্যদিকে নাঙ্গারহারে স্বেচ্ছাসেবীরা রক্তদানে ছুটে যাচ্ছেন। কুনার ও নাঙ্গারহারের অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তারা রাতভর বহুবার আফটারশক অনুভব করেছেন। নাঙ্গারহারের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী পোলাদ নূরি বলেন, পরাঘাতের ভয়ে তিনি রাত বারোটায় নিজের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি কমপক্ষে ১৩ বার আফটারশক গণনা করেছেন এবং শত শত মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার জীবনে কখনো এত ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখিনি।