বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

নেপালের শক্তিশালী ‘জেন জি’ বিক্ষোভের মুখ কে এই সুদান গুরুং

নেপাল গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক যুব বিদ্রোহে কেঁপে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সূত্রপাত কাঠমান্ডুর রাস্তায় মারাত্মক সংঘর্ষের  রূপ নেয়। এই সহিংস দমন-পীড়নের ফলে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং স্বরাষ্ট্র, কৃষি, যুব ও ক্রীড়া এবং পানি মন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রিসভার সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এর আগে ওলি বিক্ষোভে অনুপ্রবেশের জন্য ‘অবাঞ্ছিত উপাদান’ কে দায়ী করেছিলেন, জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, নিষেধাজ্ঞা কখনই সেন্সরশিপের জন্য নয় বরং ‘নিয়ন্ত্রণের’ জন্য। পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই দিনের সহিংস বিক্ষোভে কমপক্ষে ২০ জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা সংসদে হামলা চালায় এবং নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান, কাঁদানে গ্যাস এবং এমনকি তাজা গুলি ছোড়ে। ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে, মন্ত্রিসভা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। তবে, এটি ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে ব্যর্থ হয়।

এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে আন্দোলনের মুখ হিসেবে একজনের নাম উঠে এসেছে: সুদান গুরুং। একজন কর্মী এবং  তরুণদের পরিচালনায় এনজিও হামি নেপালের সভাপতি। অনেকের কাছে, গুরুং এমন একটি প্রজন্মের প্রতীক হয়ে উঠেছে যারা নীরব থাকতে রাজি নয়। সুদান গুরুং কে? কীভাবে তার এনজিও এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল? কেন এই বিদ্রোহ নেপালের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে? একবার দেখে নেয়া যাক।

নেপালের বিক্ষোভের পুরোভাগে রয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী সুদান গুরুং, যিনি হামি নেপালের সভাপতি। এটি  একটি তারুণ্য নির্ভর এনজিও যা ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ নাগরিক আন্দোলনের কেন্দ্রতে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়, এনজিওটি গুরুংকে একজন সমাজসেবী হিসেবে বর্ণনা করেছে যিনি দুর্যোগের সময় ত্রাণ প্রচেষ্টা সমন্বয় করার জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়োজিত।   আন্তর্জাতিক তহবিল এবং অনুদান সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভূমিকম্প, বন্যা এবং ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর কাছে জরুরি সরবরাহ বিতরণ পর্যন্ত সবটাই তিনি দেখেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার আগে 'হামি নেপাল' তাদের ইনস্টাগ্রাম এবং ডিসকর্ড পেজ ব্যবহার করে ৮ সেপ্টেম্বর মাইতিঘর মন্ডলায় বিক্ষোভের ডাক দেয়।  ‘কীভাবে প্রতিবাদ করবেন’ শিরোনামের ভিডিও শেয়ার করে তারা, যেখানে শিক্ষার্থীদের বই এবং ব্যাগ নিয়ে ইউনিফর্ম পরে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর গুরুং  যখন নিজের সন্তানকে হারান, তারপর থেকে  তিনি নাগরিক কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি দ্য অন্নপূর্ণা এক্সপ্রেসকে বলেন, 'আমার কোলে শিশুটি মারা গিয়েছিল। আমি সেই মুহূর্তটি কখনই ভুলব না। ' সেইসময় অনলাইনে একটি SOS পোস্ট করেছিলেন যা ২০০ স্বেচ্ছাসেবককে আকর্ষণ করে। তিনি বলেন, সেই মুহূর্তটি থেকে তার জীবন বদলে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, হামি নেপাল জোরালো সমর্থন সংগ্রহ করেছে। প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সান্দুক রুইত একজন পরামর্শদাতা হিসেবে এদের সঙ্গে কাজ করছেন, অন্যদিকে ২০১৮ সালের মিস ইউনিভার্স নেপাল মানিতা দেবকোটা হলেন এই সংস্থার শুভেচ্ছাদূত।

এর সমর্থকদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা কার্কি, যিনি একটি কোভিড -১৯ প্লাজমা ব্যাংক চালু করতে সাহায্য করেছিলেন; স্বস্তিমা খাড়কা, যিনি প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোতে  খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছিলেন; এবং গায়িকা অভয়া সুব্বা, যিনি  তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই দলটি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়  স্বাধীনভাবে কাজ করে । ইনস্টাগ্রামে, জ্বলজ্বল করে ওঠে তাদের স্লোগান - "জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা।আজ, এই এনজিওর ১,৬০০ জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে। এমনকি আল জাজিরা, কোকা-কোলা, ভাইবার, গোল্ডস্টার এবং মালবেরি হোটেলের মতো ব্র্যান্ডগুলো  থেকেও এরা সমর্থন পেয়েছে।

গুরুংয়ের নেতৃত্ব এখন নেপালের জেন -জি -এর জন্য একটি সমাবেশস্থলে পরিণত হয়েছে, যারা তাকে স্বচ্ছতা এবং পরিবর্তনের দাবির পক্ষে এক জোরালো কণ্ঠস্বর হিসেবে দেখে। সুদান গুরুং-এর কথায়, 'নতুন প্রজন্মের এগিয়ে আসার এবং দেশ পরিচালনার পুরনো পদ্ধতিগুলোকে  চ্যালেঞ্জ করার সময় এসেছে ।  যতক্ষণ আপনার ইচ্ছাশক্তি থাকবে  আপনি যেকোনো কিছু করতে পারবেন।"


সূত্র : ফার্স্টপোস্ট

এই সম্পর্কিত আরো